রমজান উপলক্ষ্যে এবারও ১০ টাকা লিটারে মিলছে দুধ
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে এবারও ১০ টাকা লিটার গরুর দুধ বিক্রি করছেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের নিয়ামতপুরের ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী এরশাদ উদ্দিন। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) প্রথম রমজান থেকে জেসি অ্যাগ্রো ফার্মে ১০ টাকা লিটার গরুর দুধ বিক্রি শুরু হয়। চলবে পুরো রমজান মাসজুড়ে।
বেলা ১১টার দিকে ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন এলাকার শতাধিক হতদরিদ্র নারী ও পুরুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ ১০ টাকায়, আবার কেউ বিনামূল্যে দুধ সংগ্রহ করছেন।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, গত চার বছর ধরে রমজান এলেই ১০ টাকা লিটার দুধ বিক্রি করেন ব্যবসায়ী এরশাদ উদ্দিন। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ তার খামার থেকে দুধ সংগ্রহ করেন। এবার আরও বড় পরিসরে কাজটি শুরু করেছেন বাংলাদেশ মিলস্কেল রি-প্রসেস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জেসি অ্যাগ্রো ফার্মের চেয়ারম্যান এরশাদ উদ্দিন। সব প্রস্তুতি শেষে রোজার প্রথম দিন থেকেই ১০ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি শুরু করেছেন।
গত রোববার (১২ মার্চ) বিকেলে নিজ ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দিয়েছেন এরশাদ উদ্দিন। সেই পোস্টে তিনি লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ আসছে মাহে রমজান প্রতি বছরের ন্যায় জেসি এগ্রো পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে ১০ টাকা কেজি দরে দুধ বিক্রি করবে। আমাদের লক্ষ্য ২ মেট্রিক টন দুধ ১০ টাকা কেজি দরে সাধারণ জনগণের কাছে বিক্রি করা হবে।
চার বছর আগে এরশাদ উদ্দিন নিজ এলাকায় জে সি অ্যাগ্রো ফার্ম নামে খামার গড়ে তোলেন। তার খামারে দুগ্ধজাত ও মোটাতাজাকরণের ৫০০ গরু রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ২০টি গরু দুধ দিচ্ছে। প্রতিদিন খামার থেকে ৭০-৭৫ লিটার দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। সেটার বড় একটি অংশ ১০ টাকা লিটার দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
রৌহা এলাকার আরিফুল ইসলাম বলেন, সত্যিকার অর্থে এরশাদ উদ্দিন সাহেব যে কাজটি করছেন এটি বিরল। তিনি অনেক ভালো মানুষ। গত কয়েক বছর যাবৎ তিনি ১০ টাকা লিটার দুধ সবার মাঝে বিতরণ করছেন। এবারও রমজানে ১০ টাকা লিটার দুধ পাচ্ছি।
নিয়ামতপুর ইউনিয়নের দেওপুর গ্রামের বাসিন্দা হোসনা আরা বলেন, রমজানের বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যায়। আমরা গরিব মানুষ। রমজানে ১০০ টাকা লিটার দরে দুধ কিনে খাওয়া সম্ভব না। সেহেরির সময় অন্তত দুমুঠো ভাত খেতে চাই দুধ দিয়ে সেই সুযোগটি করে দিয়েছেন এরশাদ ভাই। ১০ টাকা করে দুধ দিয়ে এই দুধ দিয়েই আমরা সেহরি খেয়ে রোজা রাখব। আল্লাহ এরশাদরে আরও বড় করুক, মন থেকে দোয়া করি।
রিকশাচালক রশিদ বলেন, সবসময় শুনি এখানে ১০ টাকা লিটারে দুধ বিতরণ করেন শিল্পপতি এরশাদ সাহেব। এবার দুধ সংগ্রহ করার জন্য এসেছি এবং ১ লিটার দুধ নিয়েছি আমরা অনেক খুশি। বাজার থেকে কেনা দুধে অনেক সময় পানি মেশানো থাকে। তাছাড়া দামও বেশি যার জন্য কিনতে পারি না। এখান থেকে নামমাত্র মূল্যে ভালো দুধ পাচ্ছি।
ব্যবসায়ী এরশাদ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজান এলেই আমাদের দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। বিশেষ করে রমজান শুরু হলেই এলাকায় দুধের চাহিদা বেড়ে যায়। হাট-বাজারে এক কেজি দুধ ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়। দুধের দাম নিম্নবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এ বিষয়টা চিন্তা করেই তাদের জন্য নামমাত্র ১০ টাকা মূল্যে ১ লিটার দুধ বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রথম রমজান থেকে আমাদের এ কার্যক্রম শুরু হয়ে চলবে রমজানের শেষ দিন পর্যন্ত।
তিনি বলেন, গত রমজানে দুই মেট্রিক টন দুধ ১০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করেছিলাম। এবার ২ মেট্রিক টন দুধ ১০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করবো। সে হিসেবে দৈনিক ৭০ থেকে ৭৫ জন ১০ টাকা দরে দুধ কিনতে পারবেন।
মোহাম্মদ এনামুল হক হৃদয়/আরএআর