এমপির বাসায় তুলে নিয়ে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ
ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) সংসদীয় আসনের এমপি এবিএম আনিছুজ্জামানের বাসায় এক কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ত্রিশাল পৌরসভার উপ-নির্বাচনে এমপির স্ত্রী মেয়র পদে পরাজিত হওয়ায় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় ফয়সাল আহমেদ নামে ওই ছাত্রকে।
ছাত্রলীগ নেতা ওই কলেজছাত্রকে নির্যাতন শেষে পুলিশ হেফাজতে দেওয়ার খবর পেয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতির জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়। এ নিয়ে সোমবার (১০ মার্চ) ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার বিচার চেয়েছে ছাত্রলীগ।
বিজ্ঞাপন
ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র থেকে পদত্যাগ করে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি হন এবিএম আনিছুজ্জামান। স্ত্রী শামীমা আক্তারকে পৌরসভার উপ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী করেন। স্ত্রীকে জেতাতে ভোটের মাঠে প্রচারে নেমেও আলোচনার সৃষ্টির করেন এমপি। কিন্তু ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ভোটে বিএনপির নেতার কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন এমপি পত্নি শামীমা।
এমপি পত্নির পরাজয় নিয়ে শনিবার রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফয়সাল আহমেদ। তিনি ত্রিশাল সরকারি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী ও ওই কলেজের মানবিক বিভাগ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি ত্রিশাল ইউনিয়নের চকপাঁচপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুর রহিমের ছেলে। নিজের স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছিলেন ‘পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের মেয়র (পৌর মাতা) নয় সন্তানের মায়ের কি হলো’। অবশ্য পরে সেটি ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দেন তিনি।
নির্যাতিত ফয়সাল আহমেদ বলেন, উপজেলা পরিষদের সামনে তার এক বন্ধু ডেকে নিয়ে এমপির বাসায় তিনতলায় নিয়ে রাব্বি, আবদুল্লাহ, অপরিচিত একজন ও এমপি আনিছের ছোট ছেলে সাদমান সামিন আমাকে হকিস্টিক, লোহার পাইপ, লাঠি ও চেলাকাঠ দিয়ে মারধর চলতে থাকে। বেলা ১২টার দিকে ধরে নেওয়ার পর মারধর শুরু করে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে। পরের দফায় এমপির বড় ছেলে তার লোকজন নিয়ে আরেক দফা মারধর করে।
তিনি আরও বলেন, এক পর্যায়ে পলিথিনে মুড়ানো ককটেল সামনে দিয়ে বলা হয়- 'তোকে যা বলব তাই করবি নয়তো তোর আঙুল ভেঙে দিব।' এ সময় সাবেক এমপির ছেলে হাসান আমাকে ককটেল দিয়ে এমপিকে মারার জন্য পাঠিয়েছে বলে মোবাইলে স্বীকারোক্তি রাখে। এরপর এমপির কাছে নিয়ে গেলে আমি ক্ষমা চাইলেও তিনি শুনেননি। আমাকে বিভিন্ন মামলায় জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে পুলিশ ডেকে থানায় দিয়ে দেয়।
ফেসবুক স্ট্যাটাসকে ঘিরে ফয়সালকে তুলে নিয়ে এমপির বাসায় আটকে মারধর ও পুলিশ হেফাজতে দেওয়ার খবর পেয়ে রোববার রাত ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভকালে এমপি আনিছের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। রাত সোয়া ১০টার দিকে লাটিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে থানার গেইটের সামনে গেলে এমপির লোকজন বিপরীত দিক থেকে লাঠি নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়।
দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম মিয়া, রিয়াদ আরেফিন লিয়ান, আ.লীগ নেতা আবদুস সাত্তার আহত হলে তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উদ্ধুত পরিস্থিতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম মো. সামছুদ্দিনের জিম্মায় ফয়সালকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হাসান সোহান। সেখানে আরও ছিলেন উপজেলা আওায়ামী লীগের সহ সভাপতি আশরাফুল ইসলাম মন্ডল, সাবেক পৌর কমিশনার ও আহত ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেনের বাবা দুলাল মন্ডল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসান মাহমুদ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি হওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে যারা ভোট দিয়েছে তাদের এলাকা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। মধ্যযুগীয় কায়দায় ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতন চালানোয় তারা বিচার দাবি করেন। ঘটনাটি দলীয় হাই কমান্ডকেও তারা জানিয়েছেন। আহত ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেনের বাবা সাবেক পৌর কমিশনার দুলাল মন্ডল সংবাদ সম্মেলনে আহাজারি করে তার ছেলেকে মারধরের বিচার দাবি করেন।
ত্রিশাল থানা পুলিশের ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, এমপির ফোন পেয়ে বাসা থেকে ফয়সালকে আনা হয়। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনা। ফয়সালের শরীর জুড়ে মারধরের আঘাত ছিল। তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে ত্রিশালের সংসদ সদস্য এবিএম আনিছুজ্জামান বলেন, ছেলেটিকে কোনো মারধর করা হয়নি। সে গত সংসদ নির্বাচন থেকে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। সে এখন লিখেছে আমার স্ত্রী সম্পর্কে বিভিন্ন অশ্লীল কথাবার্তা। সে যখন এগুলো লিখেছিল তখন পেছন থেকে এক ছেলে দেখে তাকে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসে। পরে আমি ওসিকে ফোন দিয়ে থানায় দিয়ে দেই।
উবায়দুল হক/এমএএস