খাদ্য কর্মকর্তাকে ঘুষ না দেওয়ায় দুইজনের ডিলারশিপ বাতিল
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসাইনের ঘুষ, দুর্নীতি ও খামখেয়ালিপনার কারণে কুলকাঠি ইউনিয়নের ১১শ হতদরিদ্র পরিবারের রমজান মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রমজানের শুরুতেই চাল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দরিদ্র্য এসব পরিবারের সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুলকাঠি ইউনিয়নের দুই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণের ডিলার বিশ্বনাথ হাওলাদার ও মানিক হোসেনের কাছ থেকে ঘুষ দাবি করেছিলেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন। তাকে ঘুষের টাকা না দেওয়ায় গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর তাদের ডিলারশিপ বাতিল করে দেন ওই কর্মকর্তা।
বিজ্ঞাপন
নিয়মানুযায়ী উপজেলা কমিটির অনুমোদন নিয়ে ডিলারশিপ বাতিল করা যায়। কিন্তু ওই কর্মকর্তা কোনো কারণ ছাড়াই কারও অনুমতি না নিয়ে ডিলারশিপ বাতিল করে দেন। এতে বিপাকে পড়েছেন দুই ডিলারের কাছ থেকে নিয়মিত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল গ্রহণকারী হতদরিদ্র্য ১১শ পরিবার। রমজানের আগেই এ চাল পাওয়ার কথা ছিল তাদের। এদিকে দুইজনের ডিলারশিপ বাতিল করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নতুন ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠির সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন দুই ডিলার। আদালত নতুন ডিলার নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পাশাপাশি পুরনো ডিলারের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন।
বিষয়টি নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকেও জানানো হয়। তিনি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাকে বেআইনিভাবে ডিলারশিপ কেন বাতিল করা হয়েছে, তা জানতে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি ওই কর্মকর্তাকে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত বলেও উল্লেখ করেন। এসব কারণে কুলকাঠি ইউনিয়নের ১১শ পরিবার ৩০ কেজি করে রমজান মাসের চাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলেও চিঠিতে বলা হয়। দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে নির্দেশ দেন ইউএনও।
কিন্তু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসাইন আদালতের আদেশ এবং ইউএনওর নির্দেশের প্রতি কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠছে। ডিলার বিশ্বনাথ হাওলাদার ও মানিক হোসেনের নামে চাহিদাপত্র (ডিও) পাঠানো করা থাকলেও তা পাঠাচ্ছেন না ওই কর্মকর্তা। সময়মতো চাল বরাদ্দ না দেওয়ায় ১১শ পরিবার রমজান মাসের চাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রামের কয়েকজন সুবিধাভোগী অভিযোগ করেন, বছরে পাঁচ মাস তারা ডিলারের কাছ থেকে ৩০ কেজি করে প্রতিমাসে চাল নেন। কিন্তু রমজান মাসে তাদের চাল এখনো দেওয়া হয়নি। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
ডিলার বিশ্বনাথ হাওলাদার বলেন, আমাদের কোনো অপরাধ নেই। কোন নিয়মও ভাঙিনি। মাস্টাররোল জমা দেওয়ার সময় দুই হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আমার ডিলারশিপ বাতিল করে দেন। তিনি একক সিদ্ধান্তে এ কাজ করতে পারেন না। এটার একটি কমিটি রয়েছে, তারা যদি তদন্ত করে কোনো অনিয়ম পায়, তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে ডিলারশিপ বাতিল করতে পারে। কিন্তু শুধু ঘুষের টাকা না দেওয়ায় ডিলারশিপ বাতিলের এখতিয়ার তার নেই।
ডিলার মানিক হোসেন বলেন, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে এই জেলায় চাকরি করছেন। তিনি এই জেলার বাসিন্দা হয়ে কীভাবে নিজের জেলায় চাকরি করেন। নিজের জেলায় চাকরি করার কারণে তিনি বেপরোয়া হয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন বলেন, দুই ডিলার অনিয়ম করায় আমি তাদের ডিলারশিপ বাতিল করেছি। এখন তারা মামলা করেছে। তাই নতুন করে চাল বরাদ্দ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সভাপতি হচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আর সদস্যসচিব হচ্ছেন খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা। সদস্য সচিব একক ক্ষমতায় কখনো ডিলারশিপ বাতিল করতে পারেন না। আমি বিষয়টি জানতে চেয়ে তাকে চিঠি দিয়েছি, তিনি এখনো কোনো জবাব দেননি। সময়মতো জবাব না দিলে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাঈম হাসান ঈমন/এমএএস