পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার আব্দুল মজিদ (৫০) টাকার অভাবে হার্টে রিং স্থাপন করাতে পারছিলেন না। গত ফেব্রুয়ারিতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন তিনি সুস্থ আছেন। গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর আব্দুল জব্বারের (৬০) হৃদরোগ দেখা দেয়। ব্যয়বহুল চিকিৎসা হওয়ায় তিনিও বেশ চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু রমেক হাসপাতালে পেসমেকার চালুর খবর জানতে পেরে চিকিৎসা করিয়েছেন সেখানে। এখন সুস্থ আছেন তিনি।

শুধু আব্দুল মজিদ এবং আব্দুল জব্বার নন, রংপুরসহ আশপাশের অনেক জেলা থেকে আসা বিশেষ করে দারিদ্র মানুষ রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে দীর্ঘ ছয় বছর পর আবারও হার্টের এনজিওগ্রাম, হার্টের রক্তনালীতে স্টেন্ট (রিং) বসানো এবং হার্টের পেসমেকার স্থাপনের মতো হার্টের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১১-১২ অর্থবছরে কার্ডিওলজি বিভাগে প্রথমবার চালু করা হয় ক্যাথল্যাব। প্রথম দিকে কয়েক বছর ধরে ল্যাবটি ভালোভাবেই চলেছে। তবে বিভিন্ন সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়েছে এটি। মেরামতের পর আবার তা সচল হয়েছে। তবে ২০১৯ সালের পর থেকে বন্ধ ছিল ল্যাবটি। এ সময়ে হাসপাতালটিতে এনজিওগ্রাম, রিং স্থাপনসহ হার্টের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাও বন্ধ ছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোনো একটি এনজিওগ্রাম মেশিন দিয়ে পুনরায় ল্যাবটি চালু করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে হার্টের এনজিওগ্রাম, হার্টের রক্তনালিতে স্টেন্ট (রিং) বসানো এবং পেসমেকার স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা আবারও শুরু হয়েছে। এতে হৃদরোগীদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমে আসবে।

রমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে প্রথমবার ক্যাথল্যাব চালু হয়। সে সময় দেড় শতাধিক এনজিওগ্রাম, রিং বসানো এবং পেসমেকার স্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। তবে কোভিডের কারণে তিন বছর এবং মেশিন নষ্টসহ বিভিন্ন কারণে মোট ছয় বছর ক্যাথল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

নতুন করে ল্যাবটি চালু হওয়ায় হৃদরোগীদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমেছে। কারণ বেসরকারি হাসপাতালে হার্টের এনজিওগ্রাম করতে খরচ হয় ১৭-১৮ হাজার টাকা। একেকটি রিং কিনতে ৭০ হাজার থেকে প্রকারভেদে দেড় লাখ টাকা লাগে। সেখানে  রিং বসাতে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে রিং রসানো চার্জ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা এবং পেসমেকার যন্ত্রের দাম দেড় লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। পেসমেকার স্থাপনে বেসরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ৬০ হাজার টাকার বেশি। সেখানে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ২ হাজার টাকা।

গত ৭ মার্চ ক্যাথল্যাবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে চলছিল রোগীর এনজিওগ্রাম। রোগীর সঙ্গে আসা রংপুর চেকপোস্ট এলাকার বাসিন্দা নুর আমিন জানান, তার রোগী নিজাম উদ্দিনের বয়স সত্তরোর্ধ্ব। তিনি ছেলের বাড়িতে বেড়াতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তার হার্টের অবস্থা ভালো নয়, এ কারণে দ্রুত এনজিওগ্রাম করাতে হবে। এ ধরনের পরীক্ষা তার মতো নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য সত্যিই কষ্টকর। পরে তিনি চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন রমেক হাসপাতালে পুনরায় কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথল্যাব সচল হয়েছে। তখন নিজাম উদ্দিনকে সেখানে ভর্তি করানো হয়েছে। এনজিওগ্রাম বাইরে থেকে করালে খরচ লাগত ১৭ হাজার টাকা। সেখানে রমেক হাসপাতালে লেগেছে দুই হাজার টাকা।

রমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় ছয় বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথল্যাব পুনরায় সচল করেছি। হার্টের সর্বোচ্চ এবং আধুনিক চিকিৎসা বলতে যা বোঝায় তা ক্যাথল্যাবে দেওয়া সম্ভব। এখন রংপুরের হৃদরোগীদের আর ঢাকা অথবা দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কম খরচে এনজিওগ্রাম, রিং বসানো এবং পেসমেকার স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা রমেক হাসপাতালে হচ্ছে।

বর্তমানে একটি মাত্র পুরোনো এনজিওগ্রাম মেশিন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন ক্যাথল্যাব চালু রাখার সক্ষমতা থাকলেও একজন টেকনোলজিস্ট দিয়ে সপ্তাহে মাত্র দুই দিন চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন ডা. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ক্যাথল্যাব সব সময় সচল রাখার জন্য দুটি মেশিন এবং দুইজন টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। যাতে একটি মেশিন খারাপ হলে অন্যটি দিয়ে কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হয়।

এ বিষয়ে রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ক্যাথল্যাবে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। ফিলিপস কোম্পানির মাধ্যমে ল্যাবটি সচল করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে যাতে ল্যাব সচল থাকে, এজন্য কোম্পানিটির সঙ্গে কম্প্রিহেনসিভ মেইনটেন্যান্স কেয়ার (সিএমসি) চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এমজেইউ