কুমিল্লায় আব্দুর রহমান (৫) নামে এক শিশুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যার দায়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় অপর আরেকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দুপুরে কুমিল্লার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের (জেলা ও দায়রা জজ) বিচারক মোছা. মরিয়ম-মুন-মুঞ্জুরী এ রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বোড়ারচর গ্রামের মো. বাতেন বেপারির ছেলে মো. ময়নাল হোসেন (৩৩), আবু মুসার ছেলে মো. নাজমুল হাছান (৩০) ও মো. ছালামত খানের ছেলে মো. শাহীন খান ওরফে শাহীন মিয়া (২০)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- একই গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে রবিউল হাসান (৩৪)।

রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোবারক হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে জেলার মুরাদনগর উপজেলার গাংগাটিয়া এলাকার ওমান প্রবাসী ফারুক মিয়ার ৫ বছর বয়সী ছেলে আব্দুর রহমানকে বসতঘর থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। পরে লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ভুক্তভোগীর পরিবার ধার করে ৩৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দেয় অপহরণকারীদের। কিন্তু তবুও শিশু আব্দুর রহমানকে হত্যা করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় অপহরণকারীরা। পরে ৪ দিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি শিশু আব্দুর রহমানকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ভুক্তভোগী শিশুর বাবা ফারুক বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। 

মামলার পর মুরাদনগর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হামিদুল ইসলাম তদন্তে নামেন। তদন্তে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঘাতক ময়নালকে শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ময়নালকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সকল দায় স্বীকার করে এ ঘটনায় জড়িত অপর আসামি নাজমুল, শাহীন ও রবিউলের নাম জানিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পরে ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি চারজনকে অভিযুক্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটির বিচার শুরু হলে ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বিবেচনা করে আসামি ময়নাল, নাজমুল ও শাহীনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করার দায়ে অপর আসামি রবিউলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এ সময় পার্শ্ববর্তী শুশুন্ডা এলাকার মো. হোসেনের ছেলে মো. আলাউদ্দিনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। 

রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শাহীন ছাড়া বাকি তিন আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। অপর আসামি শাহীন পলাতক রয়েছেন। 

আরিফ আজগর/আরএআর