আগুনে পুড়ে অঙ্গার দুধের গাভি, শেষ সম্বল হারিয়ে কাঁদছেন রুপালী
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় গোয়ালঘরে আগুন লেগে গৃহবধূ রুপালী খাতুনের শেষ সম্বল দুধের গাভি পুড়ে মারা গেছে। একই সঙ্গে রান্নাঘরে থাকা আসবাবপত্র ও চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত রোববার (৩ মার্চ) মধ্যরাতে উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের দামোদরকাঠি গ্রামে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে গাভিটি হারিয়ে কান্না থামছে না রুপালীর।
রুপালী খাতুনের স্বামী আব্দুস সালাম দামোদরকাঠী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় ভ্যানচালক। রুপালী অন্যের বাড়িতে কাজ করে অর্থ জমিয়ে গাভিটি ক্রয় করেন। গাভির দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। তার দুই ছেলে। বড় ছেলে তানভীর শেখ শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছোট ছেলে অনিক শেখ স্থানীয় কলারোয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। বাড়িতে আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে গাভিটিসহ ঘরের জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রুপালীর আহাজারিতে চোখের পানি ফেলছেন প্রতিবেশীরাও।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ রাসেল হোসেন বলেন, এই পরিবারটি এলাকার মধ্যে সবচেয়ে অসহায়। আগুনে পুড়ে তাদের সব শেষ হয়ে গেছে। গাভির যে দুধ হতো তা বিক্রি করে সংসার চালতো। সব মিলিয়ে তাদের প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এখন এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য সকলের সহযোগিতা দরকার।
রুপালী খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোববার মধ্যরাতে হঠাৎ দেখতে পাই রান্না ঘরসহ গোয়ালঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তখন আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে না। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে দেখা যায় আমার শখের শেষ সম্বল দুধের গাভিটি পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। গাভির বাচ্চাটার শরীরের অধিকাংশ পুড়ে গেছে। রান্নাঘরে কয়েক মাস খাওয়ার জন্য চাল মজুত করে রাখা ছিল সব পুড়ে গেছে। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গাভিটার দাম দেড় লাখ টাকার কাছাকাছি ছিল। সবমিলিয়ে আমার প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালাতাম, প্রতিবন্ধী ছেলেসহ ছোট ছেলেটার পড়ালেখা চালাতাম। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন কী করে সংসার চালাবো সেটা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। একদিন খাওয়ার মতো চাল বা খাদ্য সামগ্রী নেই ঘরে।
দামোদরকাটি গ্রামের ইউপি সদস্য তাইজেল হোসেন বলেন, রুপালীর বাড়িতে হঠাৎ আগুন লেগে তার শেষ সম্বল যা ছিল সব পুড়ে গেছে। এজন্য আমরা স্থানীয়ভাবে যথাসম্ভব চেষ্টা করছি এই পরিবারটির পাশে থাকার। সকলে মিলে সহযোগিতা করতে পারলে তারা আগের মতো ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবে।
হেলেতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রূপালী বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে অর্থ জমিয়ে একটি দুধের গাভি কিনেছিলেন। গাভির দুধ বিক্রি করে যে অর্থ আসতো সেটা দিয়ে সংসার চালাতেন ও ছেলের পড়াশোনার খরচ দিতেন। কিন্তু আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে তার গাভিটি পুড়ে মারা গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে তাকে সহযোগিতা করবো।
কলারোয়া উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের ফায়ার ফাইটার মামুন হোসেন বলেন, সংবাদ পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রণে আনলেও রুপালী খাতুনের রান্নাঘর ও গোয়ালঘর পুড়ে যায়। তার একটা গাভি পুড়ে মারা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে আগুনে তার প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
কলারোয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখেছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ক্ষতিগ্রস্ত নারীর ভাষ্য অনুযায়ী মশা তাড়ানোর আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।
সোহাগ হোসেন/আরএআর