নাটোরের বাগাতিপাড়ায় রহিমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাদল উদ্দিনকে পথরোধ করে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় মামলা করেছেন সেই ভুক্তভোগী শিক্ষক। কিন্তু মামলার এজাহারে নেই সেই অভিযুক্ত দুই পুলিশ কনস্টেবল সজিব হোসেন এবং কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামানের নাম। 

মামলার পর প্রধান আসামী মাহাবুর রহমান বিদ্যুতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এজাহারে উল্লেখিত ২ নম্বর আসামি কাউছার আলীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মামলার বাদী ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষক বাদল উদ্দিন বলেন, মামলায় সরাসরি ওই দুই পুলিশ কনস্টেবলের নাম দিতাম, কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করলে পরবর্তী সময়ে তারা আমাকে হ্যারেস করবে। তখন তো আমি একা হয়ে থাকব, কেউ এগিয়ে আসবে না।

তিনি বলেন, আমাকে যে ওই পুলিশ কনস্টেবলরা পিটিয়েছে এটা সবাই জানে। ওসি স্যারকে আমার শরীরে থাকা ক্ষতের ছবি প্রিন্ট করে দিয়েছি। মামলা করার দিন আমাদের আত্মীয়-স্বজন অনেকেই থানায় যায়। সেখানে ওসি বলেন, এবিষয়ে তারা সব জানেন, ওই পুলিশ কনস্টেবলদের বিরুদ্ধে তারা বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পরে আমার স্বজনরা আমাকে বলেন, মামলার এজাহারে পুলিশের নাম থাকলে সামনে আমার অনেক বিপদ হবে। সে সময় তারা আমার পাশে থাকবে না। সে কারণে পুলিশ সদস্যদের নাম বাদ দিয়ে মামলা দায়ের করেছি।

এর আগে বাগাতিপাড়া উপজেলার রহিমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাদল উদ্দিন রোববার (৩ মার্চ) স্কুল ছুটির পর মোটরসাইকেলে নাটোর শহরে বাসায় ফেরার পথে ক্ষিদ্র মালঞ্চি এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল সজিব হোসেন ও কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামান এবং পুলিশের স্থানীয় সোর্স বিদ্যুৎ ওই শিক্ষকের পথরোধ করে। এরপর কনস্টেবলরা ওই শিক্ষককের হাতে হ্যান্ডকাফ পরায় এবং তাদের সঙ্গে পুলিশের সোর্স বিদ্যুৎ রড দিয়ে ওই শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। পরে পকেট থেকে দুটি কাগজ বের করে তাতে হেরোইন আছে বলে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।

ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সজিব হোসেন এবং কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামানকে ক্লোজড করে নাটোর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগাতিপাড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নান্নু খান বলেন, মামলার এজাহারে দুই পুলিশ সদস্যের নাম বাদ দিতে কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। বাদী তার স্বজনদের নিয়ে এসেই এজাহার জমা দিয়েছে। আমি সে সময় থানায় ছিলাম না।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পুলিশ সুপারকে ফোনকল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

মামলায় প্রত্যাহারকৃত কনস্টেবলদের নাম না থাকায় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট খগেন রায় বলেন, নিরাপত্তাহীনতায় আমাদের সমাজ ভুগছে। পুলিশের কনস্টেবল মারধরের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেও তাদের নামে মামলা করার সাহস পাচ্ছে না। মামলায় কনস্টেবলদের নাম আসা উচিত ছিল। আমি মনে করি পুলিশিং আগের চেয়ে এখন আরও উন্নত হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।

গোলাম রাব্বানী/আরকে