জেসমিন আক্তার

জেসমিন আক্তার (৩৯)। গতবছরের ২০ মার্চ শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার মাওনা ল্যাব এইড হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান জরায়ুর টিউমার অপারেশন করতে। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক জানান, অবস্থা ভালো না থাকায় জরায়ু ফেলে দিয়েছেন তারা। এরপর ধার দেনা করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন জেসমিন আক্তার। পরে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেও তিনি সুস্থ হননি। 

জেসমিন আক্তার শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া গ্রামের আফাজ উদ্দিনের মেয়ে। হতদরিদ্র বাবার কোনো সহায় সম্পত্তি নেই। সরকারি খাস জমিতে থাকেন তারা। বিয়ের দুই বছর পর স্বামীও তালাক দেন তাকে। এরপর একমাত্র সন্তানকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু হয় তার। কাজ করেন একজন পোশাকশ্রমিক হিসেবে। তবে, অপারেশন করার পর থেকে তার বেঁচে থাকায় কঠিন হয়ে গেছে।

গত বছরের মার্চে জেসমিন আক্তার মাওনা ল্যাব এইড হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপারেশন বাবত ৩১ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এরপরও সুস্থ না হওয়ায় তিনি আরও বিভিন্ন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এতে তার আরও ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এরপর দিন দিন জটিলতা আরও বাড়তে থাকে। সঙ্গে অনবরত প্রস্রাবও ঝরতে থাকে। নিজের অবস্থা দিন দিন অবনতি হওয়ায় তিনি ঢাকার মামস ইন্সস্টিটিউট অব ফিস্টুলা অ্যান্ড ওমেন হেলথ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করালে চিকিৎসকরা জানান তার মূত্রনালীর কয়েক স্থান কেটে ফেলা হয়েছে। এ সময় তারা দেশের অভিজ্ঞ গাইনি চিকিৎসক অধ্যাপক সাঈবার কাছে রেফার্ড করেন। সেখান থেকে তাকে জানানো হয় তার কিডনি খারাপের দিকে যাচ্ছে, দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। এ অস্ত্রোপচারে ব্যয় হবে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো। তবে সেখানেও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

জেসমিন আক্তার বলেন, অস্ত্রোপচারের পর ভালো না হলেও জীবিকার তাগিদে পুরোনো প্রতিষ্ঠান ভিনটেজ ডেনিমে কাজে ফিরে যাই। প্রস্রাব ঝরায় শরীর থেকে দুর্গন্ধ তৈরি হওয়ায় আমার চাকরি চলে যায়। এখন খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। প্রতিমাসে ১৭০০ টাকা বাসা ভাড়া দিতে হয়। আগে বিভিন্ন মানুষের সহায়তায় চিকিৎসা করালেও এখন চিকিৎসার অর্থ না থাকায় বিনা চিকিৎসায় দিন কাটাতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যে চিকিৎসক আমার এ অবস্থা করলো তার বিচারের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কোনো সাড়া পাইনি। এখন কার কাছে যাব। জেসমিন আক্তারের একমাত্র ছেলে জাহিদুল ইসলাম জোবায়ের স্থানীয় আব্দুল মালেক মাস্টার কিন্ডার গার্ডেনের দশম শ্রেণীর ছাত্র। সে ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। 

জোবায়ের বলেন, অনেক স্বপ্ন ছিল বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ার, সংসারের অসচ্ছলতায় বাণিজ্য বিভাগে পড়ছি। সন্তানের সামনে মা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে। মায়ের অসহ্য যন্ত্রণার কান্নায় এখন নিজেকে খুব অসহায় লাগে। কিন্তু আমি তো কিছুই করতে পারছি না। তবে যে ভুল চিকিৎসায় মায়ের এ অবস্থা তার বিচার চাই। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাওনা ল্যাব এইড হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো অনুমোদন নেই। মাওনা বাজার রোডে বহুতল ভবন ভাড়া নিয়ে তা পরিচালিত হচ্ছে। জেসমিন আক্তারের অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসকের বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেও ডা. মাহমুদা আলমকে পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন এ বিষয়ে হাসপাতাল মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, এ নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিহাব খান/এএএ