বেইলি রোডে আগুন
একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক বৃৃদ্ধ বাবা
জুয়েল রানা। তার আয়ের ওপর নির্ভর করে চলতো আট সদস্যের একটি পরিবার। প্রায় ৭ বছর আগে পরিবারের অভাব গোছাতে পাড়ি জমান ঢাকায়। এরমধ্যে কয়েক জায়গায় কাজ করার পর সবশেষ গত সাত মাস আগে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন। গত ২৯ ফেব্রুয়ারির বেইলি রোডের ভবনে আগুন লাগার সময় তিনি সেখানে ছিলেন। মারা গেছেন আগুনে পুরে। তার এমন মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
জুয়েল রানার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মীঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মধুখালী গ্রামে। তিনি ইসমাইল গাজী ও মোছা. ফাতেমা দম্পতির ছেলে। সন্তানের এমন মৃত্যুতে নির্বাক বাবা। সন্তান হারানোর নির্মম ব্যথায় পাগল প্রায় মা।
বিজ্ঞাপন
পরিবারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুয়েলের দুই সন্তান রয়েছে। এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ৭ বছর। বাবার মৃত্যুতে অনেক লোকের উপস্থিতি দেখে কিছুটা অনুভব করলেও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ২ বছরের ছোট্ট ছেলে তাইফুল। বাবার মরদেহ যখন অ্যাম্বুলেন্সে করে ছোট্ট টিনের বাড়ির সামনে রাখে তখন হাতে জুস ধরে তাকিয়ে থাকে নিথর দেহের ওপর। এমন করুন দৃশ্য দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জুয়েলের মামাতো ভাই সায়মুন বলেন, পুরো পরিবার জুয়েলের ওপর নির্ভরশীল ছিল। নিজে জীবনে এত কষ্ট করেছে তা আমি কাছ থেকে দেখছি। ভাই চলে যাওয়ায় এখন তার দুই সন্তান ও তার বৃদ্ধ বাবা মাকে কে দেখবে। তাদের আর্থিক সংকট এতটা যা বুঝানোর কোনো ভাষা নেই আমার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কাওসার মুসুল্লি বলেন, জুয়েল অনেক ভালো ছেলে ছিল। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করত। জুয়েলের পরিবার সত্যিই একবারে অসহায় হয়ে গেল। তবে আমরা চেষ্টা করব সাধ্যমতো ওর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে।
মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন খান দুলাল বলেন, পরিবারটি নিঃসন্দেহে অসহায়। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে ছিল জুয়েল। এখন পরিবারটি আরও অসহায় হয়ে পড়ল। পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছি। আমরা তাদের পরিবারের পাশে থাকব। স্থানীয় বিত্তবান মানুষদের জুয়েলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।
মরদেহ বাড়িতে আসার খবরে সেখানে ছুটে যান কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। এ সময় পরিবারের হাতে ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেন দাফন কাফনের কাজে। তিনি সমাজের বিত্তবান মানুষদের জুয়েলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন।
এসএম আলমাস/এএএ