ক্যাপসিকামের ব্যাপক ফলন, বিক্রি করতে না পেরে কাঁদছেন কৃষক
জামালপুরের ইসলামপুরে এক তরুণ বেকারত্ব দূর করতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে বাম্পার। তবে জেলায় নেই ক্যাপসিকামের চাহিদা। এখন বিক্রির বাজার না পেয়ে কাঁদছেন তরুণ এই কৃষক।
উপজেলায় সাপধরী ইউনিয়নের যমুনার চর চেঙ্গানিয়া এলাকার ৪০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন ওই এলাকার তরুণ কৃষক হৃদয় হাসান।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যমুনার চরে ৪০ শতাংশ জমিতে মালর্চিং পদ্ধতিতে চাষ করা ক্যাপসিকামের গাছ। গাছে ঝুলছে সবুজ ও লাল রঙের ক্যাপসিকাম। ক্ষেত থেকে ক্যাপসিকাম তোলার সময় হয়েছে। তবে ক্যাপসিকামের চাহিদা না থাকায় এখনো তুলছে না এই কৃষক।
হৃদয় হাসান বলেন, ইউটিউব দেখে অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভের আশায় ৪০ শতাংশ জমিতে ৫ হাজার ক্যাপসিকামের চারা লাগিয়েছি। চারা লাগানোর দুই মাস পর থেকেই প্রতিটি গাছে ফল আসতে শুরু হয়। এখন গাছে ব্যাপক ক্যাপসিকাম ধরেছে। চাষ করতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। কিন্তু জামালপুরে ক্যাপসিকামের চাহিদা নেই। আবার ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতে গেলে পরিবহণ খরচ দ্বিগুণ পড়ে যায় আর লাভ থাকে না।
স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, এ জেলায় প্রথমবারের মতো ক্যাপসিকাম চাষ করেছে হৃদয়। তবে বিক্রি করার মতো কোনো জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটি ইসলামপুরের মানুষ চিনেই না। এটি যদি স্থানীয় হাট বাজারে বিক্রি হতো বা জেলা শহরে বিক্রি হতো তাহলে আমরা সহ আরও অনেক কৃষক এই ক্যাপসিকাম চাষ করত। ক্যাপসিকাম যে পরিমাণ গাছে ধরেছে সেটা দেখে বোঝা যাচ্ছে জামালপুরের মাটি এটির জন্য উপযুক্ত এবং চাষ করলে ভালো ফলন হবে।
হৃদয় হাসানের বাবা আবু সাঈদ মিয়া ক্যাপসিকাম বিক্রি না হওয়ায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার অভাব অনটনের সংসার। আগে মালয়েশিয়ায় থাকতাম তাও খুব কষ্ট করেছি। অল্প কিছু টাকা রোজগার করে নিয়ে এসেছিলাম। সেই টাকা দিয়ে আমার ছেলেসহ আমি পরিশ্রম করে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেছি। এখন ক্যাপসিকাম নিয়ে বিপদে পড়েছি। এলাকায় বিক্রি করার মতো কোনো জায়গা নেই। অনেক ফল নষ্ট হয়ে গেছে। প্রথমবার ফল বিক্রি না করতে পেয়ে বাধ্য হয়ে ঢাকার কাওরান বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে গেছিলাম। গাড়ি ভাড়া অনেক টাকা লাগে তাই ঢাকায় বিক্রি করলে লাভ হয় না।
সাপধরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, তরুণ কিছু উদ্যোক্তা হৃদয় হাসান আমার ছাত্র। এলাকায় ক্যাপসিকাম চাষ দেখে আনন্দিত হয়েছিল সকল কৃষকেরাই। তবে এটি গ্রামের হাটবাজারে বিক্রি হয় না। কারণ এই ক্যাপসিকামের সঙ্গে এখানে কেউ পরিচিত নেই। এটা কীভাবে খাইতে হয় বা কি করতে হয় কেউ জানে না। তাই এটির চাহিদা নেই, কৃষি বিভাগ বিক্রির বিষয়ে সহযোগিতা করলে তাহলে এই নতুন কৃষি উদ্যোক্তা লাভবান হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এল এম রেজুওয়ান বলেন, উপজেলায় ক্যাপসিকামের চাহিদা নেই। উপজেলায় প্রথমবারের মতো এটি চাষ করেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হৃদয় হাসান। ক্যাপসিকামের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়াও সহজেই বিক্রি করার জন্য পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
রকিব হাসান নয়ন/আরকে