রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী লামিসা ইসলামকে (২৩) চোখের জলে শেষ বিদায় জানিয়েছেন স্বজনরা। শুক্রবার (১ মার্চ) ফরিদপুর শহরের চকবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২টা ৪৫ মিনিটে শহরের আলীপুর গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 

জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন চকবাজার মসজিদের খতিব ও শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লার শামসুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মো. কামরুজ্জামান।

নিহত লামিসা বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং-১) মো. নাসিরুল ইসলামের মেয়ে। নাসিরুল ইসলাম পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কর্মরত রয়েছেন। লামিসাসহ তিনি দুই কন্যা সন্তানের বাবা। ২০১৮ সালে অসুস্থাজনিত কারণে তার স্ত্রী মারা যান। এরপর তিনি আর বিয়ে করেননি। 

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে লামিসার মরদেহ ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলি মহল্লার একতলা বিশিষ্ট বাড়ি স্বর্ণলতার সামনে আনা হয়। এ সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে আগে থেকেই ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানা পুলিশসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ৮-১০টি টহল গাড়ি ছিল। লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানটি বাড়ি সংলগ্ন খোলা জায়গায় সামিয়ানা টানিয়ে রাখা হয়। বাড়ির সামনের রাস্তায় প্লাস্টিকের চেয়ারে স্বজন ও সমকর্মীদের নিয়ে বসেন লামিসার বাবা নাসিরুল ইসলাম। তিনি চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে ছিলেন। অনেক স্বজন-সহকর্মী এসে তার আশপাশের চেয়ারে বসেন। তবে তিনি মেয়ের শোকে এতটাই নিশ্চুপ হয়ে গেছেন যে কারও সাথে কথা বলেননি। তার প্রতিবেশী ও সহকর্মীরাও চুপচাপ বসে ছিলেন। 

এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মরদেহ নিয়ে আত্মীয়-স্বজন জানাজার জন্য রওনা হয় ফরিদপুর চকবাজার জামে মসজিদের দিকে। সেখানে দুপুর আড়াইটার দিকে জানাজা শেষে আলীপুর গোরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার, ফরিদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক, ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এমদাদ হুসাইন, শৈলেন চাকমা, মো. সালাউদ্দিন, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

ফরিদপুরের দক্ষিণ ঝিলটুলি মহল্লার বাসিন্দা বেগম হিরোন নাহার (৫৪) ঢাকা পোস্টকে বলেন, লামিসা ও রাইসা দুই বোন। বিভিন্ন ছুটিতে এলাকায় আসলে দেখতাম খুব শান্তশিষ্ট মেয়ে তারা। নাসিরুল ভাই এত বড় পদের কর্মকর্তা হলেও তিনি কোমল হৃদয়ের মানুষ। ওরা দুই বোন বাবার মতোই হয়েছিল।

একই এলাকার বাসিন্দা ওয়াদুদ মিয়া (৫৯) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৮ সালে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নাসিরুল ভাই দ্বিতীয় বিয়ের চিন্তাও করেননি। বাবা হয়ে একাই বাবা-মায়ের আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছেন মেয়ে দুটিকে। আল্লাহ উনাকে কী কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করাল?

স্থানীয়রা জানান, লামিসা খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। বুয়েটে পড়াশোনা করছিলেন। আগুন আজ সব শেষ করে দিল। 

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লাগে। এতে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া গুরুতর আহত ও দগ্ধ হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

জহির হোসেন/আরএআর