মালয়েশিয়ার গোপন ক্যাম্প থেকে শতাধিক বাংলাদেশি যুবককে উদ্ধার করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। মালয়েশিয়ার সালাক সালাতন নামে একটি ক্যাম্প থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। সালাক সালাতন ক্যাম্পে বন্দি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রহমান ও আব্দুল মজিদের ছেলে আব্দুস সালাম নিজ নিজ পরিবারকে মোবাইল ফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

এ ঘটনায় বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সাহেবনগর গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন, ব্রজপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম, কল্যাণপুর গ্রামের ওবায়দুল্লাহ, আব্দুল মজিদ, রফিকুল ইসলাম, আসাদুল ইসলাম ও আতিয়ার রহমান বাদী হয়ে মানবপাচার আইনে গাংনী থানায় মামলা করেছেন। 

মুছা ইন্টারন্যাশল নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক আদম ব্যাপারী সাহেবনগর গ্রামের মৃত ইছাহাক আলীর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিমকে প্রধান আসামি ও একই গ্রামের আব্দুল হাদি ওরফে সুরজের ছেলে আব্দুল আওয়াল, আব্দুল হাদি, রঞ্জিত মন্ডলের ছেলে আমিরুল ইসলাম, নুর ইসলামের ছেলে হাসানুজ্জামান, নুর মোহাম্মদের ছেলে আরিফুল ইসলামকে মামলার আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে  নিশ্চিত করে গাংনী থানার ওসি (তদন্ত) মনোজিত কুমার নন্দী জানান, সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারীরা অর্থের বিনিময়ে লোক পাঠিয়ে প্রতারণা ও জবরদস্তিমূলক শ্রমে বাধ্য করার অভিযোগে মামলাটি এফআইআরভুক্ত করা হয়েছে।

মামলার একজন বাদী সাহেবনগর গ্রামের গ্রামের আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, আমার ছেলে আব্দুস সালামকে ভালো কাজ দেবে বলে মুসা কলিম ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেয়। প্রায় ৪ মাস আগে সে আমার ছেলেকে মালয়েশিয়াতে নিয়ে একটি ক্যাম্পে আটকে রেখেছে। ছেলে আমাকে গত সোমবার বিকেলে (বাংলাদেশ সময়) মোবাইল ফোনে জানায়, তাদের সালাক সালাতন ক্যাম্পে পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে। অর্ধশত যুবকদের উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর কথা হবে না। চিন্তা করবেন না। 

সাহেবনগর গ্রামের সাগরিকা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংসার সুখের জন্য ভিটে মাটি ও ধার দেনা করে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম আদম ব্যাপারী সাহেবনগর গ্রামের সুরজ আলীর হাতে। আমার ছেলে শাহীন আলমকে মালয়েশিয়া নিয়ে একটি ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে ৪ মাস আটকে রেখেছে। সোমবার সেখানকার ইমিগ্রেশন পুলিশ আমার ছেলেসহ প্রায় শতাধিক যুবককে উদ্ধার করেছে। এখন আর তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। 

তিনি বলেন, হাড়াভাঙ্গা, সাহেবনগর, সহড়াতলা, কাজিপুর এলাকার প্রায় তিন শতাধিক যুবকের পরিবারে এখন হতাশা বিরাজ করছে। কান্নার রোল পড়ে গেছে। 

এদিকে সাহেবনগর গ্রামের প্রধান আদম ব্যবসায়ী মুছা ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিম, সুরজ আলী, রাজু আহমেদ, তোফাজ্জেল মাস্টারসহ তাদের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পলাতক রয়েছেন।
 
মালয়েশিয়ায় আটকে থাকা ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান, স্থানীয় গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের কেএনএসএইচ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান মাজেদ, কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে ন্যাড়া, বালিয়াঘাট গ্রামের আনিসুল হক মাস্টারের ছেলে শোভন, সাহেবনগর গ্রামের সুরজ ও তার ভাই আওয়াল এবং ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিমের মাধ্যমে ঢাকায় নাভিরা ও মুসাকলি এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির মাধ্যমে টাকা দিয়ে ভালো কাজের আশ্বাসে তারা মালয়েশিয়ায় আসেন।

ক্যাম্পে আটকে থাকা যুবকরা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ৪-৫ মাস আগে এখানে এসেছি। আমাদেরও এই ক্যাম্পে আটক রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে আজকে শতাধিক যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ।

গাংনী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানবপাচারকারীদের নামে একটি মামলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আকতারুজ্জামান/আরএআর