রাজবাড়ীতে স্বামীকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যার দায়ে স্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। 

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোছা. জাকিয়া পারভীন এ রায় দেন। এ সময় আসামি সাহিদা বেগম (৫৭) আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বালিয়াকান্দি উপজেলার বংকুর গ্রামের আশরাফ সানার স্ত্রী।

আসামির বড় মেয়ে আফরোজা বেগম বাবাকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে ২০১২ সালে ৪ ডিসেম্বর মা সাহিদা বেগমকে আসামিকে করে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা যায়, আসামি সাহিদার স্বামী আশরাফ সানার বাড়ি ছিল সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার ওকাপুর গ্রামে। তিনি সাহিদাকে বিয়ে করে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বংকুর গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করেন। এখানে বাড়ি করার পর তিনি আবার সাতক্ষীরার কলারোয়াতে আরেকটি বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে আশরাফ প্রথম স্ত্রী সাহিদা বেগমের সংসারে খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেন। মাঝে মধ্যেই সাতক্ষীরা থেকে এসে আশরাফ প্রথম স্ত্রী সাহিদার কাছে টাকা চেয়ে মারধর করতেন। টাকা দিতে না পারলে বাড়ি বিক্রি দেওয়ার হুমকি দিতেন। ঘটনার দিন ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে আশরাফ টাকা চেয়ে ঝগড়া করতে থাকেন। 

একপর্যায়ে ঘর থেকে লোহার রড নিয়ে আশরাফ স্ত্রী সাহিদাকে মারতে যান। তখন সাহিদা বেগম লোহার রডটি আশরাফের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন। এ সময় আশরাফ চিৎকার করে বাড়ির পাশের ক্ষেতের মধ্যে পড়ে যান। তখন সাহিদা গিয়ে আশরাফের মাথায় রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। ওই আঘাতে ঘটনাস্থলেই আশরাফ মারা যান। ওই দিনই সাহিদার বড় মেয়ে আফরোজা বেগম বাদী হয়ে বালিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন। মামলার পর সাহিদাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। সাহিদা বেগম ৯ মাস কারাভোগের পর থেকে রায় ঘোষণার দিন পর্যন্ত জামিনে ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত হলে আদালত সাহিদাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

রাজবাড়ী জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট উজির আলী শেখ জানান, আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে ১২ বছর পর এই হত্যা মামলার রায় দিলেন। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরএআর