মৌসুম শুরুর আগেই বরিশালের বাজারে উঠতে শুরু করেছে তরমুজ। ফাল্গুনের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আগাম জাতের তরমুজ চলে আসলেও এখনো বিক্রি জমে উঠেনি। আগাম তরমুজের বাজার তৈরি না হলেও আবাদে রেকর্ড করেছে দক্ষিণাঞ্চল। গত মৌসুমের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। বাজার পেলে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে তরমুজ।

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বরিশালের তরমুজের বাজার, চাষি, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্যই জানা গেল।

কলাপট্টির আড়তদার চরমোনাই অ্যান্ড ব্রাদার্সের রফিকুল ইসলাম জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে আড়তে তরমুজ নিয়ে আসছে চাষিরা। আগাম জাতের তরমুজ হওয়ায় এসব তরমুজ সাইজে ছোট। প্রতি ১০০ তরমুজ তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি ক্রেতা ফরহাদ বলেন, বরিশাল অঞ্চলে তরমুজ বাজারে আসতে শুরু করায় এগুলো কিনে সাতক্ষীরা পাঠাব। সেখানে ভালো বাজার পাওয়া যেতে পারে। প্রথম চালানে ৩ হাজার পিস পাঠাচ্ছি।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা থেকে তরমুজ নিয়ে আসা কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আগাম জাতের তরমুজ অগ্রহায়ণ ও কার্তিক মাসে রোপণ করা। এ বছর বেশি শীত ও বৃষ্টি হওয়ায় সাইজ খুব বড় হয়নি। মৌসুমের তরমুজ উঠতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। গত বছর আগাম তরমুজ বিক্রি করে সাড়ে চার লাখ টাকা লাভ হয়। এবার প্রায় আড়াই লাখ টাকা খাটিয়ে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৮ হাজার টাকার বিক্রি করেছি। মৌসুমের তরমুজ উঠে গেছে আগাম জাতের তরমুজের চাহিদা তেমন থাকে না।

বরিশাল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, কৃষকদের তরমুজ আবাদের জন্য টাকা দিয়েছেন, বীজ দিয়েছেন। এবার শীত মৌসুমে পরপর তিনবার বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতে পানি জমেছে। এ কারণে ফল ঝড়ে গেছে। এবার প্রচুর জমিতে চাষ হয়েছে কিন্তু ফলন ভালো হয়নি।

চরফ্যাসন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান মনে করেন, তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় কিছু ক্ষেতে আমন ধানের আবাদ না করে তরমুজ করা হয়েছে। গত নভেম্বরে মিধিলির কারণে আবাদের সময় একটু পিছিয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূল ছিল। এখন বাজারে যে তরমুজ এসেছে, তা অতটা পরিপক্ব হয়নি। তাই দাম পাচ্ছে না কৃষক।

বেড়েছে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি বরিশাল থেকে জানানো হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৬৪ হাজার ১৮৩ হেক্টরে। উৎপাদন হয়েছিল ২৭ লাখ ২৪ হাজার ৩৩০ টন। আর চলতি মৌসুমে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বিভাগের ছয় জেলায় ৫৪ হাজার ২ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। যা গত বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। ইতোমধ্যে আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৬১৮ হেক্টর জমিতে। 

এরমধ্যে বরিশাল জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াই ৯৪২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। পিরোজপুরে ১২০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এখন পর্যন্ত চাষ হয়েছে ১৮ হেক্টরে। ঝালকাঠিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ৪০ হেক্টরে। পটুয়াখালীতে লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ৭৪৫ হেক্টরের বিপরীতে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৯৫৬ হেক্টরে। বরগুনা জেলায় ১৩ হাজার ৮৩৮ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাষ হয়েছে ৬১৫ হেক্টরে। ভোলায় ১১ হাজার ২৪৯ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে। বিভাগে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয় ভোলা ও পটুয়াখালীতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশালের আঞ্চলিক অতিরিক্ত পরিচালক শওকত ওসমান জানান, কম খরচে ভালো ফলনের মাধ্যমে লাভবান হওয়ায় তরমুজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। জমি তৈরি থেকে মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রায় চার মাসের মতো সময় লাগে। এ ছাড়া তরমুজ উচ্চফলনশীল হওয়ায় অনেকেই পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছেন। আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে তরমুজ চাষের মাধ্যমে বরিশাল অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনবে।

তিনি আরও বলেন, আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে। তরমুজের ফলন সবসময়ে বরিশাল বিভাগে ভালো হয়। বাজারে কৃষক দাম ভালো পেলে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে বলে আশা করছি।  

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএএ