লক্ষ্মীপুরের ‘দ্রুততম মানব’ শাহাদাত
প্রত্যেক মানুষেরই একটা স্বপ্ন থাকে। যে স্বপ্ন ছোটবেলা থেকে মনে লালিত হয়। সবাই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে একটু একটু করে গড়ে তোলেন। তেমনই এক স্বপ্ন বুকে লালন করছে স্কুলছাত্র শাহাদাত হোসেন হৃদয়। দৌড় প্রতিযোগিতায় সেরা হয়ে ইতোমধ্যে হৃদয় লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রীড়াঙ্গনকে আলোকিত করে তুলেছে। স্থানীয়দের কাছে সে এখন জেলার ‘দ্রুততম মানব’ হিসেবে পরিচিত। জেলার সেরা কিশোর হিসেবেও লাভ করেছে সনদ।
হৃদয় ক্রীড়াঙ্গনে সফলতা দেখিয়ে সেনাবাহিনী অথবা বিজিবিতে চাকরির সুযোগ পাওয়ার স্বপ্নেই এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সেরার কৃতিত্ব দেখিয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে প্রতিদিন ভোরে ঘর থেকে বের হয়ে কয়েক কিলোমিটার দৌড়ে অতিক্রম করে। রমজান মাসেও ফিটনেস ঠিক রাখতে দৌড়ের পরিবর্তে সকালে দৌড়লাফ দিয়ে আসছে।
হৃদয় লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড লামচরী এলাকার নিয়াজ উদ্দিন মিঝিবাড়ির ব্যবসায়ী ফারুক হোসেনের ছেলে। সে লক্ষ্মীপুর কলেজিয়েট উচ্চবিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখা থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই হৃদয় ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলায় পারদর্শী ছিল। ২০১৭ সালে হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তার মনোনিবেশ শুরু হয় দৌড় প্রতিযোগিতায়। এরপর থেকে প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ২০০, ৪০০ ও ১৫০০ মিটার দৌড়ে স্কুলের সেরা স্থান অর্জন করে। ২০১৮ সালে সোপিটে ও পিকেএসএফের সেরা কিশোর-কিশোরী হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলায় নিজের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। তখন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাত থেকে সে সনদ গ্রহণ করে।
হৃদয় ২০১৯ ও ২০২০ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা অ্যাথলেটিকসে ২০০, ৪০০ ও ১৫০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় সেরার পুরস্কার পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু ম্যারাথন লক্ষ্মীপুর জেলা-২০২১ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে। এ জন্য হৃদয় জেলার দ্রুততম মানব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সম্প্রতি তাকে ভাষার প্রদীপ নামে একটি সংগঠন সংবর্ধনা দিয়েছে।
হৃদয় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আয়োজিত বাংলাদেশ জুনিয়র গেমস-২০২০, বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২১, যুব গেমস-২০২০, চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আয়োজিত বাংলাদেশ অলম্পিক-২০১৭, বিভাগীয় গেমস-২০২০, সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে আন্তস্কুল জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা-২০১৯ এ অংশ নেয়।
জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন হৃদয় বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি সেনাবাহিনী অথবা বিজিবিতে কাজ করার স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু উচ্চতা নিয়ে বিপাকে রয়েছি। তবে দৌড় প্রতিযোগিতায় নিজেকে সেরা প্রমাণিত করতে পারলে চাকরি পেতে উচ্চতার ঘাটতি কাটানো যাবে। নিজের মতো করে আমি প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে সারা বছর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমিসহ জেলার অন্য প্রতিযোগীদের জন্যও ভালো হতো।
হৃদয়ের বাবা ফারুক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি হৃদয় খেলাধুলায় ভালো করছে। আমি সব সময় তাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছি। সে নিজের সেরাটা খেলে বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে লক্ষ্মীপুরের মুখ উজ্জ্বল করবে। তার স্বপ্নপূরণে সব সময় আমার দোয়া রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর কলেজিয়েট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোদেজা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খেলাধুলায় হৃদয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। আশা করি তার স্বপ্ন পূরণ হবে। জেলা পর্যায়ে হৃদয় আমাদের প্রতিষ্ঠানকে সেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক যেকোনো কাজে আমরা তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। হৃদয় আমাদের বিদ্যালয়ের গর্ব।
অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুরের কোচ ইলিয়াস হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হৃদয়ের স্বপ্ন সে সামরিক বাহিনীতে চাকরি করবে। খেলাধুলায় ভালো অবদান থাকলে চাকরি পেতে সুযোগ হয়। এখন দৌড় প্রতিযোগিতায় তার কঠোর পরিশ্রম রয়েছে। লক্ষ্মীপুরে সারা বছর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। সরকারিভাবে যদি পুরো বছর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে হৃদয় আরও দক্ষ হয়ে উঠবে। এতে জাতীয়ভাবে সেরা হয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও সে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেতে পারে।
এনএ