ব্রয়লারের চেয়ে চাহিদা বেশি বাউ মুরগির, খুশি খামারিরা
দেখতে হুবহু দেশি মুরগির মতো, কিন্তু শারীরিক বৃদ্ধি ব্রয়লার বা বিদেশি কোনো জাতের মুরগির মতোই। এমন জাতের মুরগি উদ্ভাবন করেছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা। এই মুরগিই এবার ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে। এই মুরগি পালন করে সফল হয়েছেন অনেক খামারি। মাত্র ৪০-৪২ দিনে এই মুরগির ওজন ১ কেজি ছাড়িয়ে যায়।
সারাদেশের মতো সিরাজগঞ্জেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই মুরগি। জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার আঙ্গারু গ্রামের মানুষের কাছেও এই মুরগি বাউ মুরগি নামেই পরিচিত। ইতোমধ্যে তাদের কাছে নতুন আস্থার জায়গা তৈরি করেছে নতুন জাতের এই মুরগি। শুধু আঙ্গারু গ্রামেই ৩০টির অধিক খামারে পালন করা হচ্ছে বাউ মুরগি।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ আলী এবং অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্লা দীর্ঘদিন গবেষণা করে ‘বাউ ব্রো মুরগি বা বাউ মুরগি’ নাম দিয়ে নতুন জাতের দুটি স্টেইন বা জাত উদ্ভাবন করেন। উদ্ভাবিত জাত দুটির নাম রাখা হয়েছিল বাউ-ব্রো-হোয়াইট ও বাউ-ব্রো-কালার।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এসপিজিআর প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত ‘দেশে প্রাপ্ত মুরগির জার্মপ্লাজম ব্যবহার করে ব্রয়লারের প্যারেন্ট স্টক উদ্ভাবন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৪ সালে গবেষণা শেষে জাত দুটি উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছিলেন গবেষকরা। বাকৃবির মুরগির জাত দুটি এখন টেকসই প্রযুক্তি হিসেবে ছড়িয়েছে সারাদেশে। প্রচলিত ব্রয়লার মুরগির মতো ঘরেও লালন-পালন করা যায় এই জাতের মুরগি।
উল্লাপাড়া উপজেলার আঙ্গারু গ্রামের বাউ মুরগির খামারি শাহিদা খাতুন জানান, পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে ও মানবমুক্তি সংস্থার সহযোগিতায় প্রথম পর্যায়ে ১৫০টি মুরগি নিয়েছিলাম। এ মুরগি পালন করে মাত্র ৪৫ দিনেই গড় ওজন প্রায় ১ কেজি ৩০০ গ্রাম হয়েছে। যা বিক্রি করে লাভবান হয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমি আরও ৫০০টি বাউ মুরগির বাচ্চা নিয়ে পালন করব। এই মুরগি দেশি মুরগির মতো হওয়ায় বাজারে অনেক চাহিদা।
আঙ্গারু গ্রামের আরেক খামারী আম্বিয়া খাতুন জানান, বাউ মুরগি পালনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। এই মুরগি পালনে সুবিধা হলো দেশি মুরগির তুলনায় অল্প দিনে বাজারজাত করা যায় এবং অন্য মুরগির তুলনায় ওজন ভালো আসে।
মানবমুক্তি সংস্থার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মারুফ হাসান জানান, বাকৃবির উদ্ভাবিত বাউ মুরগি একটি উন্নত জাতের মুরগি। খামারের বায়োসিকিউরিটি, নিয়মিত টিকা প্রদানসহ কীভাবে মুরগি পালন করে লাভবান হওয়া যায়- সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। সবচেয়ে কম সময়ে এই মুরগির শারীরিক বৃদ্ধি বেশি হওয়ায় খামারিরা লাভবান হন।
উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ব্রাউ ব্রো বা বাউ মুরগি পালন করে আমার উপজেলার অনেকেই লাভের মুখ দেখেছে। ব্রয়লার মুরগি অনেকের কাছেই অপছন্দের, সেখানে বাউ মুরগি তাদের কাছে খুবই পছন্দের মুরগি হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। খেতেও দেশি মুরগির মতো স্বাদ। আমিও নিজেও অনেকগুলো খামার পরিদর্শন করেছি। এ মুরগিতে রোগ-বালাই খুবই কম হয়ে থাকে। উন্নত এই মুরগির জাতকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাব।
বাউ মুরগির উদ্ভাবকদের একজন অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা বলেন, বাউ মুরগি এখন সবার কাছেই পরিচিত। খেতে সুস্বাদু, মৃত্যুহার কম, উৎপাদন বেশি হওয়ারর কারণেই খামারি ও ভোক্তা পর্যায়ে এর চাহিদাও অনেক। আমরাও চেয়েছি এই মুরগি যেন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য শুরুর দিকে বিনামূল্যেও বাউ মুরগির বাচ্চা সরবরাহ করেছিলাম। পরবর্তীতে খামারিদের কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ মুরগি লালন-পালনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণেই দ্রুত এটা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
আরএআর