গতকাল রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মা। সকালেই দুই ছেলের পরীক্ষা। শেষ পর্যন্ত মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে অশ্রুসিক্ত চোখে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের এসএসসি পরীক্ষা দিল সাইফুল ইসলাম (১৬) ও আসাদ মল্লিক (১৫) নামে দুই ভাই। 

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া বন্দর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয় তারা। পরীক্ষা শেষে দুপুর ২টায় তারা মায়ের জানাজায় অংশ নেয়। জানাজা শেষে তাদের মাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

এসএসসি পরীক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম ও আসাদ মল্লিক কাউখালী উপজেলার জোলাগাতি গ্রামের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন মল্লিকের ছেলে। তারা ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর ভিটাবাড়ীয়া নূরজাহান মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। 

পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ইফুল ইসলাম ও আসাদ মল্লিকের মা শাহানা বেগম (৫৬) বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ তার অবস্থার অবনতি হয়। স্বজনরা তাকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায় তার মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুর সংবাদে ভেঙে পড়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম ও আসাদ মল্লিক। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মায়ের মরদেহের পাশে বসে থাকে দুই ভাই। স্বজনেরা তাদের নানাভাবে মা হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেন। পরে স্বজনদের কথায় মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিতে যায় সাইফুল ইসলাম ও আসাদ মল্লিক। তাদের সঙ্গে এক স্বজনকে কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পর স্বজনরা তাদের মায়ের মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নেন। দুই শিক্ষার্থীর মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম ওই কেন্দ্রে ছুটে যান। তিনি সাইফুল ইসলাম ও আসাদ মল্লিককে সান্ত্বনা দেন। কেন্দ্রের বাইরে তাদের স্বজনের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে তারা বের হয়ে মায়ের জানাজার জন্য বাড়িতে যায় এবং দুপুর ২টায় জানাজার পর তাদের মায়ের দাফন সম্পন্ন হয়।

এসএসসি পরীক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম জানায়, মা তাদেরকে অনেক ভালোবাসতেন। মা চাইতেন যেন তারা পড়াশোনা করে ভালো ফলাফল করতে পারে। তাই মায়ের কথা ভেবেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তারা।

কেন্দ্রসচিব ভান্ডারিয়া বন্দর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম ও আসাদ মল্লিকের মা হারানোর বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। তাদের কক্ষের পর্যবেক্ষকসহ আমি কেন্দ্রে তাদের খোঁজখবর রেখেছি। পরীক্ষার কক্ষে মাঝেমধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়লে সহপাঠীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে পরীক্ষা ভালো হয়েছে তাদের।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহিরুল আলম বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে ওই কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছি। ওই পরীক্ষার্থীদের সান্ত্বনা দিয়েছি। তাদের পরীক্ষা ভালো হয়েছে।

আরএআর