ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন নদী ভরাট করে রিসোর্ট নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফেসরাডাঙ্গী ব্রিজের নিচে শ্বেতপদ্ম নামে রিসোর্টের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গন নদীর ওপর ফেসরাডাঙ্গী ব্রিজ সংলগ্ন ৯ একর জমির ওপর ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে রিসোর্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে মাটি ভরাটের কারণে সংকুচিত হচ্ছে নদী।  নদীর স্বাভাবিক গতি পরিবর্তিত হয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এলাকার জমি, ফসল, বসতভিটা রক্ষার দাবি জানিয়ে স্থানীয়রা গত ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্য, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডিসহ কয়েকটি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। 

এরপর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নদীর সীমানা নির্ধারণে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমানের নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ওই কমিটি জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই অনুসারে রিসোর্ট নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। 

ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ যেভাবে মাটি ভরাট করেছে তাতে ফেসরাডাঙ্গী ব্রিজের ১২টি স্প্যানের মধ্যে উভয় পাশের সাতটি স্প্যানের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে নদীর তীরে ভাঙন দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় কৃষক আশরাফুল বলেন, নদীর ওপর রিসোর্ট নির্মাণ হলে বন্যার সময় কৃষিজমি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে তবে মানুষের ক্ষতি করে নয়। গরিব মানুষের ঘরবাড়ি ও কৃষি জমির কথাও ভাবতে হবে। অনেকেই নিজ জমিতে নদীর ধারেই পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটিতে বসবাস করছেন। এমনিতেই বর্ষায় টাঙ্গন নদী ফুলে ফেঁপে ওঠে। এমন অবস্থায় নদীর গতিপথে বাধা সৃষ্টি করা হলে গোটা গ্রাম নদীতে চলে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে এলাকার কৃষক। ভিটে ছাড়া হবে কয়েকশ পরিবার। এ অবস্থায় রিসোর্টটি নির্মাণের আগেই জেলা প্রশাসনসহ সরকারের হস্তক্ষেপ চান স্থানীয়রা। 

এ বিষয়ে শ্বেতপদ্ম রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন কামাল বলেন, আমি যে জমিতে রিসোর্টটা তৈরি করতে চাই সেটা আমার নিজের জমি। সরকারের জমির ওপর আমি রিসোর্ট করছি না।

তিনি বলেন, মৌখিকভাবে আমাকে বলা হয়েছে। সেই জন্য গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আমি কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য কোনো লিখিত কাগজ আমাকে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া এই কাজে অনেকে জড়িত। সকল শ্রেণির মানুষ এখানে জড়িত রয়েছে। সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট, ডাক্তারসহ সকল শ্রেণির মানুষ এটার সঙ্গে জড়িত। আমি না বুঝে কাজটি করিনি। নদী থেকে অনেক দূরেই আমার রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে। আমার মনে হয় ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো ভালো কাজ হবে- এটা সাংবাদিকরা চান না। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।  

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটিতে এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন রয়েছে। সেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেই আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। 

তিনি বলেন, যেহেতু জমির বিষয় এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয় সেজন্য সময় লাগছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা প্রতিবেদন পাওয়ার পরই এই কাজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। 

এ বিষয়ে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান শরীফ উদ্দিন বলেন, আমি অফিসে নতুন জয়েন করেছি। এ বিষয়টি এখনো আমি জানি না। যেহেতু এখন জানলাম- এটার বিষয়ে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব। 

আরিফ হাসান/আরএআর