ফরিদপুরে আট বছরের শিশু আবু বক্কারকে হত্যার দায়ে শিশুটির চাচাতো ভাই মো. জিন্দার খলিফাকে (২৭) মৃত্যুদণ্ড এবং জিন্দারের সহযোগী মাহাবুল শেখকে (৪০) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।

সাজাপ্রাপ্তরা ফরিদপুরের নগরকান্দার পুরাপাড়া ইউনিয়নের মেহেরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তাদের পুলিশ প্রহরায় জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

নিহত শিশু আবু বক্কার খলিফা নগরকান্দার পুরাপাড়া ইউনিয়নের মেহেরদীয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. পাচু খলিফার ছেলে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আদালত জিন্দার খলিফাকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে গলায় রশি দ্বারা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। এছাড়া জিন্দার খলিফাকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর  ৭ ধারায় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং একই আইনের ৮ ধারায় যাবজ্জীবন করাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমান করা হয়।

আদালত আসামি মাহাবুল শেখকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ এর ৭ ধারায় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং একই আইনের ৮ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় তিন বছর করে সশ্রম করাদণ্ড দেন। আসামিদের সকল সাজা একত্রে চলবে বলে জানিয়েছেন আদালত।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যায় পুরাপাড়া বাজার থেকে নিখোঁজ হন শিশু বক্কার। ২ জুলাই ও ৮ জুলাই তার ছেলের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে অজ্ঞাত ব্যক্তি পাচুকে ফোন করে জানায়, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ বাবদ তিন লাখ টাকা দাবি করেন অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি। এ টাকা নিয়ে পাচুকে মাওয়া ঘাটে যেতে বলা হয়। এ ঘটনায় ওই বছর ১০ জুলাই পাচু খলিফা নগরকান্দা থানায় তার ছেলেকে অপহরণ করার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এই অপহরণ মামলাটি তদন্ত করেন নগরকান্দা থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল গফফার। তিনি তদন্ত শেষ করে ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জিন্দার ও মাহবুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তাতে বলা হয়, নিহত শিশুটির বাবা পাচু খলিফা এলাকায় আর্থিকভাবে অবস্থা সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এ কারণে জিন্দার পরিকল্পনা করে আবু বক্কারকে অপহরণ করে চাচা পাচুর কাছ থেকে টাকা আদায় করবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুরাপাড় বাজারে জিন্দারের সহযোগী ইজিবাইক চালক মাহবুল আবু বক্কারকে একটি পুরি কিনে দেন। পরে মাহবুল অন্যান্য যাত্রীর সাথে আবু বক্কারকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তার চালিত ইজিবাইকে উঠায়। সব যাত্রী পথে নেমে গেলে বক্কারের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি বাগানে বক্কারকে নিয়ে যায় মাহবুল। পরে পরিকল্পনা মত জিন্দার সেই বাগানে যায়। পরে আবু বক্কারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহটি পাশে একটি ডোবায় কচুরিপানার নিচে রেখে দেওয়া হয়। এর ১৬ দিন পর ১৭ জুলাই ওই ডোবা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে নগরকান্দা থানা পুলিশ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) স্বপুন কুমার পাল বলেন, চাচার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য একটি শিশুকে অপহরণ ও হত্যা করে জিন্দার ও মাহবুল এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সমাজে এ জাতীয় ঘটনা যাতে আগামীতে কেউ ঘটাতে না পারে তার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এই রায়।

জহির হোসেন/আরএআর