গ্রামের জরাজীর্ণ এক মসজিদ নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা সৌদি প্রবাসী মোক্তার ঢালীকে ফান্ডে কিছু টাকা দান করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু মসজিদ ফান্ডে বেশি টাকা দান করার ইচ্ছা থেকে বিষয়টি তিনি তার সৌদি মালিককে জানান। সৌদির সেই ধনকুবের চার কোটি টাকা ব্যয় করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জরাজীর্ণ ওই মসজিদটিকে দৃষ্টিনন্দন করে নির্মাণ করে দিয়েছেন। এমনকি সৌদি থেকে এসে সন্তানদের নিয়ে ওই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে গেছেন তিনি।

সম্প্রতি এমনই ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার কুলকুড়ি নামক গ্রামের কবিরাজ বাড়ি জামে মসজিদে। গ্রামের মসজিদ নির্মাণের জন্য সৌদি মালিককে বলেছিলেন কুলকুড়ি গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোক্তার ঢালী। মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়া সৌদির ওই নাগরিকের নাম শেখ হামুদ আলী আল খালাফ।

স্থানীয় ও মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রত্যন্ত গ্রামের জরাজীর্ণ মসজিদটি নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা প্রবাসী মোক্তার ঢালীকে কিছু টাকা দান করার প্রস্তাব করেন। মোক্তার জরাজীর্ণ মসজিদটি নির্মাণ করতে তার মালিক শেখ হামুদ আলী আল খালাফকে কিছু টাকা দান করতে বলেন। বাংলাদেশী মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সৌদির ওই ধনকুবের চার কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদটি টাইলসসহ পাকা করে নির্মাণ করে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। বিষয়টি মোক্তার ঢালী মসজিদ কমিটি ও স্থানীয়দের জানালে তারাও সৌদি নাগরিকের এই প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার পর মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চার কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদটি নির্মাণের পর সৌদির ওই নাগরিক তার চার মেয়েকে নিয়ে দৃষ্টিনন্দন মসজিদটিতে নামাজ পড়তে আসার ইচ্ছে পোষণ করেন। কবিরাজ বাড়ি জামে মসজিদে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে সৌদি থেকে রাজধানী ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে এসেছেন সৌদি নাগরিক শেখ হামুদ আলী আল খালাফ। এমন খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ধর্মপ্রাণ মানুষ তাকে বরণ করার জন্য অপেক্ষা করেন। এরপর গত শুক্রবার তিনি কুলকুড়ি এলাকায় এলে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন এলাকাবাসী। মসজিদটিতে আনন্দ সহকারে জুমার নামাজ আদায় শেষে শেখ হামুদ আলী আল খালাফ আল্লাহর নিকট শুকুরিয়া আদায় করেন। এলকাবাসীও সৌদির ওই ধনকুবের, তার পরিবার ও কর্মচারী মোক্তার ঢালীর জন্য দোয়া করেন।

মসজিদটিতে জুমার নামাজ আদায় করতে এসেছিলেন মোহাম্মদ নান্নু মিয়া (৫০)। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মোক্তার ঢালী প্রায় ২০ বছর ধরে সৌদি নাগরিক শেখ হামুদ আলী আল খালাফের কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন। এলাকার জরাজীর্ণ মসজিদটি নির্মাণে তার অনুদান কামনা করলে ওই ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণের জন্য চার কোটি টাকা দান করেন। ওই টাকায় দৃষ্টিদনন্দন করে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, মসজিদে নামাজ আদায় করেছি। সৌদি নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই আমি দোয়া করি।

মোক্তার ঢালী বলেন, আমার পরিবার ও সৌদির শেখ হামুদ আলী আল খালাফের জন্য আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। যাতে তিনি সুস্থ থাকেন। আরও মসজিদ নির্মাণ করতে পারেন।

মসজিদটির ইমাম মুফতি মোরশেদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর নবীর দেশের এক বান্দার উছিলায় দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ নির্মাণ হয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামে। মসজিদটি দৃষ্টি নন্দন করে গড়ে তুলতে যারা জড়িত তাদের সকলের জন্য দোয়া করি।

সৌদি নাগরিক শেখ হামুদ আলী আল খালাফ বাংলা জানেন না বলে আরবি ভাষায় দোয়া চেয়েছেন মসজিদের ইমাম ও এলাকাবাসীর কাছে। যা তার কর্মচারী মোক্তার ঢালী বাংলায় অনুবাদ করেছেন। শেখ হামুদ আলী আল খালাফ জানিয়েছেন, বাংলাদেশে মসজিদ নির্মাণ করতে পেরে তিনি অনেক আনন্দিত। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেছেন। তিনি এ মসজিদটি নিজের চোখে দেখার জন্য তার চার মেয়েকে নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করতে এসেছেন। তিনি মোক্তারের সহযোগিতায় এ কাজ করতে পেরেছেন। কুলকুড়ি এলাকার মানুষ অনেক ভালো। তাকে অনেক সমাদর করেছে। তাদের সকল কাজ অনেক সুন্দর হয়েছে। তিনি আগামীতে এরকম মসজিদ আরও নির্মাণ করবেন ইনশাআল্লাহ।

সৌদির ওই ধনকুবেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডামুড্যা পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম রাজা ছৈয়াল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শেখ হামুদ আলী আল খালাফ ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ। বাংলাদেশীদের ধর্মপ্রেম উনাকে মুগ্ধ করেছে। উনি পাশের আরেকটি মসজিদে ১৭ লাখ টাকা দান করে গেছেন। ডামুড্যা পৌরসভার পক্ষ থেকে সৌদিয়ান নাগরিক শেখ হামুদ আলী আল খালাফকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

সাইফ রুদাদ/আরকে