মৌমাছি চাষ করে সফল ও স্বাবলম্বী হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মনিরুল ইসলাম। মৌমাছি চাষ করেই এখন তিনি লাখপতি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে মধু সংগ্রহ করেন মনিরুল। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম ২০১০ সালে ১৩টি বক্সে মধু চাষ শুরু করেন। এরপর স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০টি ডিজিটাল বক্সসহ আর্থিক সহযোগিতা পান তিনি।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) গোমস্তাপুরে মনিরুলের খামারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১০০টি বক্সে মৌচাষ করছেন তিনি। বক্সের ভেতর থেকে ভেসে আসছে মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ। বক্সগুলোর ওপরের অংশটা মোড়ানো কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে।

মনিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ২০১০ সালে ১৩টি বক্স নিয়ে মৌমাছি চাষের যাত্রা শুরু করি। মৌমাছি চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা তাই ১৪ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। প্রতি বছর ১৭৫ থেকে ২০০ মণ মধু উৎপাদন করি। যা বিক্রি করে বছরে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় হয়। তবে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা মতো লাভ থাকে। এই বছরে আমার ৮০টির মতো বক্স নষ্ট হয়ে গেছে তাই এবার মধু উৎপাদন কম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মৌমাছি চাষে আয়ের উৎস সবচেয়ে বেশি। এই চাষে কোনো জিনিস ফেলে দেওয়ার মতো নেই। মরা মৌমাছিটিও কাজে লাগে। প্রোপোলিস (রজনী পদার্থ যা মৌমাছিরা গাছের কুঁড়ি থেকে সংগ্রহ করে), রয়েল জেলি, মৌামছির বিষ আমরা সংগ্রহ করতে সক্ষম। কিন্ত আমাদের দেশে ব্যাণিজিকভাবে বাজারজাত করার ব্যবস্থা এখনো নেই, তাই বেশি লাভবান হতে পারছি না। শুধু এখন আমাদের বাজার মধু ও মমের ওপর নির্ভরশীল। আমরা যদি এক কেজি রয়েল জেলি সংগ্রহ করি, তাহলে এর মূল্য পাব এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা, এক কেজি প্রোপোলিসের মূল্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

তিনি মধু সংগ্রহের বিষয়ে আরও বলেন, আমরা সাধারণত কাঠের বক্স ব্যবহার করি। যা দিয়ে শুধু মম ও মধু সংগ্রহ করা যায় কিন্ত ডিজিটাল বক্স দিয়ে মম, মধু, পরাগ রেনু, পুলেন, প্রোপোলিস ও মৌমাছির বিষ সংগ্রহ করা যায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মধুর বাজার অনেক বেশি। বাংলাদেশের মধু সবচেয়ে ভালো মধু। কারণ সরিষা, তিল, লিচু, বরইসহ আরও অনেক কিছু থেকে আমরা মধু সংগ্রহ করতে পারি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, গত বছর ২৪ হাজার ৮৩৫ হেক্টরে সরিষা আবাদ হয়েছিল। এই বছরে চলতি মৌসুমে জেলার ৫টি উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৩২ হাজার ১৭২ হেক্টর জমিতে আর আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার ৫৫০ হেক্টরে। মৌচাষ করলে সরিষার ফলন আরও ভালো হয় এবং মৌচাষ একটি ব্যাপক লাভজনক ব্যবসা।

আশিক আলী/আরকে