ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা থেকে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদীয়া ইউনিয়নে এক আত্মীয়ের জানাজায় যাচ্ছিলেন নুরুজ্জামান বাবলু (৪৫)। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছার মাত্র এক কিলোমিটার আগে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। 

আলালপুর সংলগ্ন বড়বিলা এলাকায় তাদের বহন করা সিএনজিচালিত অটোরিকশাটিকে চাপা দেয় শেরপুরগামী একটি বাস। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নুরুজ্জামানসহ তার স্ত্রী শীলা আক্তার (৩৫) ও তাদের শিশুপুত্র মো. সাদমান (৭)। এছাড়াও এ ঘটনায় ফুলপুর উপজেলার দিও গ্রামের অটোরিকশাচালক আলামিন হোসেন (২৫) ও ধোবাউড়া উপজেলার উত্তর ডোমঘাটা গ্রামের গোলাম মোস্তফাসহ (৫০) অজ্ঞাত আরও দুইজনের মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শেরপুরগামী বাস ও ময়মনসিংহগামী সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুটোই দ্রুত গতিতে চলছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অটোরিকশাটি একটি গাড়িকে ওভারটেক করতে চাইলে সামনে চলে আসে বাস। এতে বাসটি সিএনজিটিকে চাপা দিয়ে টেনেহিঁচড়ে কমপক্ষে ২০০ মিটার দূরে নিয়ে যায়। ফলে দুর্ঘটনায় অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে চালকসহ সাত যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে আরও এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে বাসটি থামিয়ে পালিয়ে যায় বাসের চালক ও তার সহযোগীরা।

নিহত নূরুজ্জামান বাবলুর চাচাতো ভাই জানান, তার ভাই-ভাবি ও শিশুপুত্র ময়মনসিংহের চর ঈশ্বরদিয়ায় যাচ্ছিলেন এক আত্মীয়ের জানাজায়। সিএনজি চালকের অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে আজ তাদের লাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।

এদিকে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নিঃস্ব নিহত অটোরিকশাচালক আলামিনের পরিবার। স্বামীর লাশের পাশে বসে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার স্ত্রী রহিমা খাতুন। বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘কত বলেছি সিএনজি চালিও না। সিএনজি চালানোই আজ আমার কাল হলো, আমার স্বামীকে কেড়ে নিল।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মাসুদ সরকার জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করি। কিন্তু ততক্ষণে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সাত যাত্রীই মারা যান। সিএনজিটি দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ায় মরদেহগুলোও ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়।

কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শেরপুরগামী আদিল সরকার পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে খবর পেয়ে দুপুর ১টায় জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দ্রুত এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিহত প্রত্যেকের দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

উবায়দুল হক/আরএআর