সংরক্ষিত আসনে রাজবাড়ী থেকে আ.লীগের মনোনয়ন চান যারা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে রাজবাড়ী থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন ১১ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেত্রীও রয়েছেন।
মনোনয়ন কেনা নারীরা হলেন- একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সালমা চৌধুরী রুমা, একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলী, রাজবাড়ী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় মহিলা সংস্থা রাজবাড়ী জেলা শাখার চেয়ারম্যান তানিয়া সুলতানা কংকন, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদা চৌধুরী তন্বী, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মীর মাহফুজা খাতুন মলি, বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি তাহেরা খাতুন লুৎফা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাদিরা আক্তার, বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম (আসাফো) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামিমা আক্তার মুনমুন, সৈয়দা মোশফেকা সালেহিন এবং শুভাগতা গুহ রায়।
বিজ্ঞাপন
সালমা চৌধুরী রুমা
সালমা চৌধুরী রুমা একাদশ জাতীয় সংসদের ৩৩৪নং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। তার বাবা মরহুম ওয়াজেদ চৌধুরী রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দলকে সুসংগঠিত করতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন তিনি। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। তিনি রাজবাড়ী থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার মেয়ে সালমা চৌধুরী রুমা রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত তিনি। সালমা চৌধুরীর স্বামী সোলেমান খান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা। তার স্বামী বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন
খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেনের জন্ম রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের মিয়া বাড়িতে। তার বাবা মরহুম এসএম মোতাহার হোসেন মিয়া কো-অপারেটিভ ব্যাংকের পরিদর্শক ও হিসাব নিরীক্ষক ছিলেন। তিনি ঢাকায় বসবাস করেন এবং সেখানেই দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা জজকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া তিনি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে সদস্য পদ পেয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন-৩৮ এর সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০১৩ সালে ২৮ নভেম্বর ঢাকার শাহবাগে বিরোধী দলের ডাকা অবরোধ চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দুইজন মারা যান এবং বেশ কয়েকজন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেনের শরীরের ২৫ শতাংশের বেশি পুড়ে যায়। দীর্ঘদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলী
কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী ১৯৬০ সালের ৭ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাজবাড়ী জেলার জন্য নির্ধারিত সংরক্ষিত নারী আসন ৩৮নং আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রাজবাড়ী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তার স্বামী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রাজবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র।
তানিয়া সুলতানা কংকন
তানিয়া সুলতানা কংকন রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা গভর্নর মরহুম অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াজেদ চৌধুরীর পুত্রবধূ। তিনি ১৯৮৮ সালে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। বর্তমানে মহিলা আওয়ামী লীগের রাজবাড়ী জেলার সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি গত ১০ বছরেরও বেশি সময় যাবৎ সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের অসহায়-অবহেলিত নারী সমাজকে সচেতন করে তুলতে ধারাবাহিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। জাতীয় মহিলা সংস্থার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা অবহেলিত নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে থাকেন। এ যাবৎ তিনি ৩ হাজার ২০০ জন দুস্থ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত ও অসহায় নারীকে কর্মমুখী করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
মীর মাহফুজা খাতুন মলি
মীর মাহফুজা খাতুন মলি রাজবাড়ী-১ আসনের ছয়বারের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীর ছোট ভাই কাজী ওয়াজ্জেহাত আলী ফরিদের স্ত্রী। তার শ্বশুর মরহুম কাজী হেদায়েত হোসেন ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব করেন এবং ১৯৭০ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার মাত্র তিন দিন পর দুষ্কৃতিকারীরা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য তাকেও পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করে।
মীর মাহফুজা খাতুন মলি কাজী পরিবারের পুত্রবধূ হিসেবে ১৯৯২ সাল থেকে অদ্যাবধি মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। ২০০৪ সালে বিএনপি জোট সরকারের আমলে জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তার নেতৃত্বে আন্দোলন-সংগ্রামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুব মহিলা লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া তিনি জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতিও ছিলেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
মীর মাহফুজা খাতুন মলির জন্ম ১৯৬৪ সালের ১২ আগস্ট। তার বাবার নাম মরহুম মীর সামছুদ্দীন আহমেদ ও মার নাম মীর আমেনা সামছুদ্দীন। তিনি ১৯৭৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি, ১৯৮১ সালে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে বিএসসি (সম্মান), ১৯৮৮ সালে এমএসসি এবং ১৯৮৮ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড ডিগ্রি অর্জন করেন।
সাহিদা চৌধুরী তন্বী
সাহিদা চৌধুরী তন্বী রাজবাড়ী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মহিলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
শামিমা আক্তার মুনমুন
শামিমা আক্তার মুনমুন বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামের (আসাফো) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফকির আব্দুল জব্বার বর্তমান রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এ ছাড়া তার বাবা রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রশাসক। শামিমা আক্তার মুনমুন রাজবাড়ীর ডা. আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক। এ ছাড়া রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি রাজবাড়ী ইউনিটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সৈয়দা মোশফেকা সালেহীন
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ রফিকুছ সালেহীনের স্ত্রী। সৈয়দ রফিকুছ সালেহীন রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারি ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন।
শুভাগতা গুহ রায়
শুভাগতা গুহ রায় রাজা সূর্য কুমারের নাতনি। রাজা সূর্য কুমারের ছেলে সমীরেন্দ্র রায় গুহ’র মেয়ে শুভাগতা গুহ রায়। রাজা সূর্য কুমার ছিলের রাজবাড়ী অঞ্চলের একজন জমিদার। তার নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ করা হয়। তার পিতামহ প্রভুরাম নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজকর্মী ছিলেন। কিন্তু পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের জয়ের পর তিনি রাজবাড়ীর লক্ষ্মীকোলে এসে আত্মগোপন করেন। পরে তার ছেলে দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ এই অঞ্চলে জমিদারি গড়ে তোলেন। তারই ছেলে রাজা সূর্যকুমার ১৮৮৫ সালে জনহিতকর কাজের জন্য রাজা উপাধি পান। ব্যক্তিগত জীবনে শুভাগতা গুহ রায় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।
এমজেইউ