সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার বাকি মাত্র একদিন। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির ও বাড়িতে বাড়িতে দেবীর আরাধনায় ব্যস্ত হয়ে উঠবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পূজা ঘিরে শিল্পীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রতিমা সাজাতে। দিন-রাত কাজ করে সঠিক সময়ে প্রতিমা হস্তান্তরে পুরোদমে মনোনিবেশ করেছেন তারা। তুলির আঁচড়ে বিদ্যার দেবী সরস্বতীকে সাজাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা।   

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্র জানায়, মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করা হয়। লক্ষ্মীপুরের প্রত্যেকটি হিন্দুপাড়ায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবের ভাব বিরাজ করছে। আগামী বুধবার পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে বাড়িতে। তবে এবার পূজার পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। এজন্য কিছুটা উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। সরস্বতী পূজাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ। শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ জিউর মন্দির, লক্ষ্মীপুর পৌর কুরি বাড়ি, শ্যাম সুন্দর জিউর আখড়া, শ্রী শ্রী রক্ষা কালি মন্দির, শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর সেবাশ্রম, সমসেরাবাদ কালিবাড়ি মন্দির, আনন্দময়ী কালি মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে।

প্রতিমা শিল্পী বিমল চন্দ্র পাল জানান, প্রায় এক মাস আগে দুই ছেলে কার্তিক চন্দ্র পাল ও গণেশ চন্দ্র পালকে নিয়ে তিনি লক্ষ্মীপুর আসেন। তাদের বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। তারা ১০০টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। পূর্ব-পুরুষের পেশা হিসেবেই এখনো এটি আঁকড়ে ধরে আছেন। ভবিষ্যতও হয়ত এ পেশাতেই শ্রম দেবে।

শ্যাম সুন্দর জিউর আখড়ায় গিয়ে শিল্পী কার্তিক চন্দ্র পাল ও তার ভাই গণেশ চন্দ্র পালকে প্রতিমায় তুলির আঁচড় দিতে দেখা যায়। তুলির আঁচড়ে প্রতিমাগুলো দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হচ্ছে। নিখুঁতভাবে আঁকছেন প্রতিমার চোখগুলো। কার্তিক চন্দ্র পাল বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আমরা প্রতিমা তৈরির কাজ করি। এবার লক্ষ্মীপুরে এসে ১০০টি প্রতিমা তৈরি করেছি। দিন-রাতের অধিকাংশ সময়ই কাজ করতে হয়। এখন তুলির আঁচড়ে প্রতিমাগুলো সাজাচ্ছি। নির্ধারিত সময়েই প্রতিমা হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের সবচেয়ে বড় প্রতিমা দিয়ে পূজার আয়োজন করা হবে কুরি বাড়িতে। শ্যাম সুন্দর জিউর আখড়ায় ঢুকতেই প্রথমে প্রতিমাটি চোখে পড়ে। এ ব্যাপারে কুরি বাড়ির সদস্য পিয়াস চন্দ্র কুরি বলেন, সরস্বতী বিদ্যা ও সঙ্গীদের দেবী। আমাদের বাড়িতে প্রতিবছরের মতো এবারও সবচেয়ে বড় প্রতিমা দিয়ে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। পূজার দিন সকালে দেবীর আরাধনা ও শিশুদের হাতেখড়ি হবে। আর দুপুরে ব্রাহ্মণ ভোজনের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপে প্রদীপ প্রজ্বলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যক্রম সমাপ্ত করা হয়।

একতা তারুণ্য সংঘের সাধারণ সম্পাদক সনাতন দত্ত বলেন, সংগঠনের উদ্যোগে আমরা শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ জিউর মন্দিরে সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছি। প্রতিবছরই আমরা এ আয়োজন করেছি।

লক্ষ্মীপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিমুল সাহা বলেন, বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। সেই পূজা প্রত্যেকটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানেই হওয়া উচিত। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বছর পূজার আয়োজন করা হচ্ছে না বলে জানতে পেরেছি। পূজার পরদিন থেকে এসএসসি পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন রয়েছে। আগামীতে প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন পূজার আয়োজন করা হয়। আশা করছি সবাই শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/জেডএস