টিসিবির পণ্যে নিম্নমানের চাল বিতরণ ও নারীকে মারধরের অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে টিসিবির পণ্যে নিম্নমানের চাল বিতরণ ও এক নারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়ন পষিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে নারীকে মারধর ও নিম্নমানের চাল বিতরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিলার রকি ও জিহাদ হোসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৮টা থেকে জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। পণ্য বিতরণ করছিলেন ডিলার আয়ান মুদি স্টোরের মালিক রকি ও জিহাদ মুদি স্টোরের মালিক জিহাদ হোসেন। টিসিবির পণ্য নিতে পরিষদে যান রসনা বেগম নামের এক নারী। তিনি প্যাকেটে তেলের বোতল না পেয়ে ডিলারের কাছে অভিযোগ করলে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। একপর্যায়ে ডিলার জিহাদ হোসেন ওই নারীর পিঠে থাপ্পড় মেরে বের করে দেন।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, টিসিবির পণ্যে যে চাল দেওয়া হয়েছে, তা খুবই নিম্নমানের। এমন চাল গরুকেও খাওয়ানো হয় না। বাধ্য হয়ে তারা দুর্গন্ধযুক্ত চালের ভাত খাচ্ছেন।
ভুক্তভোগী আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী রসনা বেগম অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শনিবার মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবির পণ্য আনতে গিয়েছিলাম। আমি মোট তিনজনের কার্ড নিয়ে গিয়েছিলাম। পরিষদে আমাকে পণ্য দেওয়ার পর নিচে নেমে দেখি আমার প্যাকেটে তেলের বোতল নেই। পরে আমি ডিলার জিহাদের কাছে গিয়ে তেলের বোতলের কথা বললে সে বলে, তেল দিয়েছি। অথচ আমি তেলের বোতল পাইনি। পুনরায় তাকে তেলের কথা বললে সে গালাগালি শুরু করে এবং আমার পিঠে থাপ্পড় মেরে নিচে নামিয়ে দেয়।’
প্রত্যাক্ষদর্শী মনোহরপুর ইউনিয়নের সাবেক মহিলা মেম্বার হাবিবা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চাচী (রসনা বেগম) ওদের কাছে গিয়ে বলছে আমি তেল পাইনি। আর ওই লোকটা জিহাদ (ডিলার) খুব গালাগালি করছে ওনাকে। এতো গালাগালির পর চাচী তাও সরছে না। এবার জিহাদ চাচীর পিঠে দড়ম করে চড় মারে।’
আরেক প্রত্যাক্ষদর্শী হামিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘টিসিবির পণ্য দেওয়ার সময় আমার চাচীর সঙ্গে ঝগড়া-গণ্ডগোল হচ্ছিল, গালাগালি হচ্ছিল। হাতাহাতিও হয়েছে। আমি গিয়ে বাঁধা দিয়েছি। পরে পুলিশের ভয় দেখালে আমরা চলে আসি।’
এ ঘটনায় টিসিবির পণ্য বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ট্যাগ অফিসার আকিমুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন , ‘এমন একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছিল। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে মীমাংসা করে দিয়েছি।’
নারীকে চড় মারার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমি বাইরে ছিলাম। হট্টগোল দেখে ভেতরে গিয়েছিলাম। সে সময় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে আমি যাওয়ার আগে কী হয়েছে, তা আমি জানি না।’ নিম্নমানের চাল বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চাল আমিও দেখেছি যে এটা নিম্নমানের। এখানে আমার কিছুই বলার নেই।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডিলার রকি বলেন, ‘ওই নারী তেল পাইনি এমন অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসে। আমরা বলেছি যে তেল দেওয়া হয়েছে। তারপরও ওই নারী না শুনলে বলেছি, পণ্য বিতরণ শেষে তেলের বোতল থাকলে দেওয়া হবে। ওই নারীকে চড় মারার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমন কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি।
ডিলার জিহাদ হোসেন বলেন, বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে একটু ধাক্কা দিয়েছি মাত্র। এটা তেমন গুরুতর কিছু না, যে নিউজ করতে হবে।’ নিম্নমানের চাল বিতরণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে যে চাল আসে, সেটাই আমরা বিতরণ করি। এখানে বাইরে থেকে চাল নিয়ে এসে বিতরণের কোনো সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তিথি মিত্র বলেন, গতকাল রোববার সন্ধায় ‘আমি দুজন ডিলারসহ উভয়পক্ষকে ডেকে ছিলাম। মূলত ঘটনা হচ্ছে ওই নারী তিনজনের পণ্য উঠানোর পরে আরও কার্ড নিয়ে গেলে, ওই সময় তেল ছিল না। তাকে বলা হয় যে তেল পরে দেবে। এসময় ওই নারীর ট্যাংরা নামের এক আত্মীয় এসে টিসিবির ডিলারকে চড় মারে। পরে ডিলার ওই নারীকে হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে ওখানে নিষ্পত্তি করা হয়। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি।
নিম্নমানের চাল বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আফজালুল হক/আরকে