শীতের পিঠা বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালির শখের খাবার হলো পিঠা। এদেশে এমন মানুষ কমই আছে যারা পিঠা পছন্দ করে না। বাঙালির এই পিঠার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে নাটোর জেলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ নবাব সিরাজউদ্দৌলা সরকারি (এন.এস) কলেজে নানান পদের মুখরোচক পিঠা-পুলি নিয়ে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নাটোর শহরের বড়গাছায় অবস্থিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর ১৮টি স্টলে প্রায় ২০০ ধরনের পিঠা নিয়ে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে কলেজটির ১৩টি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। পিঠা মেলাকে ঘিরে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। সব মিলিয়ে পিঠা উৎসবটি কলেজের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, দেশি-বিদেশি প্রায় দুই শতাধিক বাহারি পদের পিঠাপুলি নিয়ে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের নামে স্টল দেন শিক্ষার্থীরা। স্টলগুলোতে মালাই রোল, পাতা বাহাড়ি, ঝিনুক, দুধ চিতই, দুধ পুলি, চন্দ্র পুলি, নারকেল পুলি, খোলা চিতই, তেল পিঠা, নকশী পিঠা, আলুর চম, মালাই বিহার, সুজির বড়া, জামাই পিঠা, পাটি সাপ্টা‌, গোলাপ ফুল, ডাবের পিঠা, লবঙ্গ পিঠা, শামুক পিঠা, রুপালি পিঠা, বুটের বরফি, মোহনভোগ, ডিম সুন্দরী পাটি সাপ্টা‌, মাছের পিঠা, গাজরের হালুয়া ডিমপুরি, গোলাপ, মলাই ক্ষীরপুলি, চুই পিঠাসহ প্রায় দুই শতাধিক পদের পিঠা শোভা পায়। বাহারি পদের এসব পিঠা খেতে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং বহিরাগতদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টা পর্যন্ত বিক্রি হয় এসব পিঠা।

পিঠা উৎসবে কথা হয় নবাব সিরাজউদ্দৌলা সরকারি কলেজের ইসলামী ইতিহাস বিভাগের স্টলের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের কলেজে দ্বিতীয়বারের মতো পিঠা উৎসব হয়েছে। আমাদের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের স্টলে এসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শীতের পিঠা খাওয়ার পাশাপাশি দারুণ সময় কাটিয়েছেন।

তিনি বলেন, এই উৎসবকে ঘিরে গত ৫ দিন ধরে সবাই মিলে পিঠা বানিয়েছি, আজ স্টলে বসে সেগুলো বিক্রি করছি। সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে অনবদ্য সময় অতিবাহিত করেছি আমরা।

পিঠা উৎসব দেখতে এসেছিলেন কলেজটির একাদশ শ্রেণীর ছাত্র পরশ হোসেন। তিনি বলেন, কলেজে এসে নতুন নতুন অনেক পিঠার সাথে পরিচিত হলাম। এত পদের পিঠার নাম আগে আমি জানতামই না। বেশ কিছু পিঠা কিনেও খেয়েছি। দারুণ সময় কাটল।

কলেজটির রসায়ন বিভাগের শিক্ষক রিপন পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পিঠার ঘ্রাণে পিঠার টানে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজ ক্যাম্পাস শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নানা পদের পিঠাপুলি এই মেলায় শিক্ষার্থীরা উপস্থাপন করেন। শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন পিঠা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। বাঙালির ঐতিহ্য শীতের পিঠাকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচিত করে দিতে এই উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম বলে জানান তিনি।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পিঠা বাঙালির কৃষ্টি কালচারের ধারক ও বাহক। এই ঐতিহ্যটি শিক্ষার্থীদের মাঝে আরো ভালোভাবে জানিয়ে দেওয়া এবং তারা যাতে এই ঐতিহ্যকে ধারণ করতে পারে মূলত এই উদ্দেশ্যই পিঠা উৎসবটি করা।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো কলেজে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো। কলেজ প্রশাসন থেকে উৎসব আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেছি। এমন আয়োজন আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান অধ্যক্ষ।

গোলাম রাব্বানী/পিএইচ