বাংলাদেশে জার্বেরা, টিউলিপ ও লিলি ফুল চাষ করে সুনাম কুড়িয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুরের ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন। ২০২০ সালে দেশে প্রথমবারের মতো টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে সারাদেশে আলোচনায় আসেন তিনি। টিউলিপ-জার্বেরা ফুলের নাম নিলে দেলোয়ারের নাম চলে আসে। পরপর তিন বার তিনি ফুটিয়েছেন রঙ বেরঙের টিউলিপ। 

সফলতা পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছোটে আসে দেলোয়ারের বাগানে। তারা এ ফুলের প্রেমে পরে এ ফুল চাষে উদ্যোগী হন। ইতোমধ্যে টিউলিপ ফুলের চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে দেশজুড়ে আর তাদের  পেছনে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন ফুলচাষি দেলোয়ার। এর আগে বিদেশি ফুল জারবেরা চাষেরও পথ দেখিয়েছিলেন তিনি। দেলোয়ারের সফলতায় সরকার তাকে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকেও ভূষিত করেন।

নানা প্রতিবন্ধকতায় দেলোয়ার এবার নিজের বাগানে টিউলিপের শেড আর স্থাপন করেননি। তবে এখনো তার স্বপ্ন আছে এই টিউলিপ ঘিরে। ফুলচাষের অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে অবদান রাখতে চান তিনি। কিন্তু এ কাজ তার একার পক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না, প্রয়োজন সরকারি সহায়তা।

দেলোয়ার এবার প্রায় এক হাজার টিউলিপের টব তৈরি করেছেন। ফুল ও কলির মিশ্রণে প্রতিটি টব ৫০০ টাকা  করেও বিক্রিও করছেন। বাজারে বেশ চাহিদাও রয়েছে, সৌখিন ফুলপ্রেমীদের বাসা-বাড়ির বারান্দায় এখন জায়গা পেয়েছে শীতের দেশের এই টিউলিপ।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি ফুলকে বাণিজ্যিকীকরণে কাজ করছি। আমি ফুলের ব্যবসা করি। আমি দুই বছর টিউলিপের যে চাষ করেছি সেটা পর্যটন পর্যায়ে চলে যায়। এটার উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। পর্যটন পর্যায়ে থেকে কোনো আয় আসে না। যা খরচ হয় তা ব্যক্তিগত পর্যায়ে পুষিয়ে ওঠা সম্ভব না। সামনের বার বড় করে আমরা উৎপাদনে যাব, সেটার লক্ষ্যই হবে বাংলাদেশে টিউলিপ ফুলের বিকাশ ঘটানো। দেশে ফুলের বাজার ধরে জাতীয় আয়ে ভূমিকা রাখা।

তবে এর আগে যেটা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে সরকারি সহায়তা। যেমন টিউলিপের বাল্ব আমদানি করতে উচ্চ হারে ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে হয়। এটি করমুক্ত রাখা ও দেশের পতিত সরকারি জমি লিজ দিয়ে সহায়তা করা। এভাবে ফুলচাষিদের সহায়তা করলে দেশের অনেকেই টিউলিপ চাষে এগিয়ে আসবে। আমরা এ সহায়তাটা চাচ্ছি।

দেলোয়ারের ছোট্ট টিউলিপ বাগান থেকে টিউলিপের টব কিনেছেন আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, গত বছর এই সময়ে দেলোয়ারের টিউলিপ বেশ সাড়া ফেলেছিল। এবার একই সময়ে টিউলিপ বাগান দেখতে পাইনি। দেলোয়ার হোসেন এবার টিউলিপ বাগান না করায় আমার মতো টিউলিপ বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরছেন। সরকার যদি উদ্যোগ নেয়, তাহলে টিউলিপ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে টিউলিপকে বাণিজ্যিকীকরণে দেলোয়ার হোসেনকে সহযোগিতা করার।

ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে টিউলিপ দেখতে এসেছিলেন মার্জিয়া আকতার। তিনি বলেন, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছিলাম এই বাগানে। তখন বেশ সুন্দর ছিল বাগানটি। টিউলিপের সৌন্দর্য দেখতে এবার এলেও বাগান না করায় হতাশ হয়েছিলাম। পরে টিউলিপের টব বিক্রি করতে দেখে সেই হতাশা কেটে গেছে। আমি এখন থেকে দুইটি টিউলিপের টব সংগ্রহ করেছি। যা দেখতে এতই সুন্দর যে চোখ ফেরানো দায়।

টিউলিপ ফুলের চাষ সম্প্রসারিত করতে দেলোয়ার হোসেনকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশের ফুলের বাজারে। এছাড়াও বাণিজ্যিক অবস্থানও ভালো। ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন যদি টিউলিপ ফুল চাষ করে বাংলাদেশের বাজারে ছড়িয়ে দিতে চান সেক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের পক্ষ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

চলতি মৌসুমেও দেলোয়ার হোসেন নেদারল্যান্ডস থেকে ৪০ হাজার টিউলিপের বাল্ব (বীজ) আমদানি করেছেন। যা পঞ্চগড়ের ইউএসডিও নামে একটি এনজিওর মাধ্যমে  ২২ হাজার, চট্টগ্রামে ৬ হাজার, ঢাকায় ৩ হাজার, রাজশাহীতে ৬ হাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষ হয়েছে। এবার একটু বেশি শীত হওয়ায় ফুলও ফুটেছে ভালো। 

শিহাব খান/আরএআর