জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে ফরিদপুর থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন আট নারী নেত্রী। জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তারা হলেন, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঝর্ণা হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি মাসুদ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুমান আরা বেগম ও আনোয়ারা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের স্ত্রী রুমানা হক, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুসরাত রসুল তানিয়া, সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হিরু চৌধুরীর স্ত্রী সুরাইয়া চৌধুরী।

ফরিদপুরের রাজনীতি সচেতন ব্যাক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক জেলার মধুখালি উপজেলার মথুরাপুর এলাকার বাসিন্দা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানকে। এরপর স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেন মাহমুদা বেগম। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিনে আব্দুর রহমানকে ভাই বলে সম্বোধন করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন তিনি। এরপর ওইদিনই ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মাহমুদা বেগম বলেছিলেন, ‘কোনো চাপ-ভয় কিংবা প্রলোভনে আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিনি’। আমার বড় ভাই, রাজনৈতিক গুরু, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সংগ্রামী নেতা রহমান ভাই অর্থাৎ নৌকার সমর্থনে আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছি।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঝর্ণা হাসান ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ আলীপুর মহল্লার বাসিন্দা। তিনি প্রয়াত শ্রমিকনেতা ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান লাভলুর স্ত্রী। ঝর্ণা হাসান এর আগে ফরিদপুর জেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ছিলেন। ২০২০ সালে তিনি জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। ঝর্ণা হাসানের ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি মাসুদ। তিনিও ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা ও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি দীর্ঘদিন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিবের দ্বায়িত্ব পালন করেন। আইভি মাসুদের স্বামী সৈয়দ মাসুদ হোসেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের গত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আইভি মাসুদ ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ফরিদপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি।
 
সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুসরাত রসুল তানিয়া ফরিদপুর শহরের কমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সমানতালে ফরিদপুর-৩ (সদর) ও ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদ ও মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের পক্ষে কাজ করেছেন। ফরিদপুর-৩ আসনে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকের কর্মীদের দ্বারা স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদের কর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এনে বার বার সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদ।ওইসব সংবাদ সম্মেলনে তানিয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক ও তার কর্মীদের কার্যক্রমকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম আখ্যা দিয়ে বার বার বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহর বিপক্ষে ভোট চেয়েছেন তিনি। ওই আসনে নিক্সনের পক্ষে একাধিকবার নিক্সনের মেয়ে নাজোরা মুজিব চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঈগল প্রতীকে ভোট চেয়েছেন তানিয়া।

মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর চার জনের মধ্যে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুমান আরা বেগম নগরকান্দা উপজেলার মধ্যজগদিয়া মহল্লার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন মহিলা আওয়ামী লীগকে তৃণমূলে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করেছেন। দ্বায়িত্ব পালন করেছেন ফরিদপুর জেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হিসেবেও। জেলা আওয়ামী লীগের অপর সহসভাপতি আনোয়ারা বেগম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক আরিফের মা। তিনি ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা। আনোয়ারা বেগমের স্বামী শাহ মো. নূরুন্নবী বৃহত্তর ফরিদপুরসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য।

ফরিদপুর শহরের আলীপুরের বাসিন্দা আওয়ামীলীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের স্ত্রী রুমানা হক। যতটা না রাজনৈতিক নেত্রী তার চেয়ে শামীম হকের স্ত্রী হিসেবেই বেশি পরিচিত রুমানা। শামীম হক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর সদর আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদের কাছে প্রায় ৭০ হাজার ভোটের বিশাল ব্যবধানে হেরে যান। তিনি সংসদ সদস্য হতে না পারলেও তার স্ত্রীকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করতে চাচ্ছেন তিনি। শামীম হকের পক্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিশেষ নজর রয়েছে বলে ফরিদপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোনা যায়।নির্বাচনের আগে গত ২ জানুয়ারি ফরিদপুরে জনসভা করতে এসে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ৭৫'পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে শামীম হকের ভূমিকার প্রশংসা করেন।এবং নেদারল্যান্ডস আওয়ামী লীগ গঠন ও দলের পক্ষে শ্রম দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ওইদিন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক নেত্রী সুরাইয়া চৌধুরী সদরপুরের কৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি কৃষ্ণপুর  ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হিরু চৌধুরীর স্ত্রী।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঝর্ণা হাসান বলেন, দলের একজন পরীক্ষিত কর্মী হিসেবে দলের নানান সংকট সম্ভাবনায় দলের পাশে থেকেছি।দলও আমাকে মূল্যায়ন করেছে। সংরক্ষিত আসনে আমাকে সুযোগ দেওয়া হলে আমি এলাকার উন্নয়ন ও সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নেত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাব।

জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি মাসুদ বলেন, অনেক বড় দল আওয়ামী লীগ। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে। দলের কাছে অনেকেই মনোনয়ন চেয়েছেন এবং সবাই আওয়ামী রাজনৈতিক পরিবারেরই সদস্য। বড় দল হওয়ায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড় বেশি। তবে এদের মধ্য থেকে দল একজন নিবেদিতপ্রাণ নেত্রীকে বেছে নেবে বলে আমার বিশ্বাস।

তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দ্বায়িত্ব পালন করেছি। দলীয় সব কর্মসূচিতে সক্রিয় থেকেছি।দল আমার বিষয়টা বিবেচনায় নিলে দলের মর্যাদা রাখতে চেষ্টা করে যাব।

জহির হোসেন/আরকে