ইন্টার্নদের প্রতি রোগীর ছেলের আকুতি
‘আর মাইরেন না স্যার, আমার আম্মু মরি যাবে’
‘আর মাইরেন না স্যার, আর মাইরেন না। আমাকে বের করে দেন, আমাকে বের করে দেন স্যার। আমার আম্মু মরি যাবে স্যার।’ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসা নিতে এসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে মারধরের শিকার হওয়া সুমন পারভেজ রিপনের (২৮) এমন আকুতির ১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী রিপনের বাড়ি রাজশাহী নগরীর বোসপাড়া মহল্লায়। রিপনের মা পিয়ারা বেগম (৬০) গত শুক্রবার থেকে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
বিজ্ঞাপন
ওই ভিডিওতে রিপনের আকুতির পরেও তাকে মারপিট করা হয়েছে। এ সময় এক ইন্টার্ন চিকিৎসক তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে শোনা গেছে। তখন ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক রিপনকে উদ্দেশ্য করে বলেন,‘আমাদের মধ্যে এই ছেলেটা সবচেয়ে নিরীহ। আর এর সঙ্গে তুই বেয়াদবি করছিস। এ সময় সুমন পারভেজ রিপন ‘ও মা’ ‘ও মা’ বলে চিৎকার করে বলেন ‘আর মাইরেন না স্যার’
এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসককে বলতে শোনা যায়, আচরণ করার আগে মনে ছিল না। তখন নার্সকে ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, আপনি যান আপনাদের ওখানে বেয়াদবি হয়েছে। আপনি যান শুনে আসেন, ও বেয়াদবি করছে কি না। অপর ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘এরে নেড়া করে দেই।’
তখন রিপন বলেন, ‘স্যার আমাকে বের করে দেন, আমাকে বের করে দেন স্যার।’ পাশ থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন ‘এই তুই বের হবি কেন। তুই না ডাক্তার দেখবি, দেখ। এই কার বয়স কত বল।’ তখন রিপন বলেন,‘আমার আম্মু মরি যাবে স্যার।’ ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘এই তোর মা মরবে কি না মরবে তা আমরা দেখব।’ এ সময় রিপনকে বেধরক মারধর করা হয়। তখন রিপন ও মা ও মা বলে চিৎকার করতে থাকেন। আর বলতে থাকেন হাত ভেঙে গেল, হাত ভেঙে গেল।
ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘ডাক্তারের গায়ে হাত দিয়ে চাইছিলি না, হাত কাইটা রাইখা দেয়।’ তখন কয়েকজন সিনিয়র ইন্টার্ন চিকিৎসক বলতে শোনা যায়, হয়েছে হয়েছে থাম থাম। রিপন বলেন, ‘আমি কাউকে মারিনি।’ তখন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘এই তুই মারার চেয়ে বড় কিছু করছিস।’
এরপর বিষয়টি নিয়ে রিপনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পিয়ারা বেগমের (৬০) ছেলে রিপনকে দরজা বন্ধ করে এভাবেই বেধড়ক পিটিয়েছেন একদল ইন্টার্ন চিকিৎসক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বেলা ১১টার দিকে রিপন বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকের কাছে তার মায়ের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে যান। এই রিপোর্ট দেখার সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়। পরে রিপন সেখান থেকে চলে গেলে কৌশলে ডেকে একদফা মারধর করা হয়। এরপর একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক এলে রিপন তাকে ঘটনার বিষয়ে জানাতে যান। তখন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের সামনেই দ্বিতীয় দফায় রিপনকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যান। রিপনের বক্তব্য শোনার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহমদ বলেন, রিপন ডাক্তারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিল। ডাক্তাররা লিখিত অভিযোগ করেছেন। রিপন কোনো অভিযোগ করেনি। রিপনকে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ছয় সদস্যের একটা তদন্ত কমিটির ড্রাফ করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ দিলে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে।
শাহিনুল আশিক/এএএ