ধর্ষণ করতেই চুরির ঘটনা সাজান আ. লীগ নেতা
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষণ করতেই চুরির ঘটনা সাজিয়েছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সি (৫০)। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী মেহরাজ (৪৮) সিঁধ কাটেন এবং গরু বেপারী মো. হারুনকে (৪২) নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেন।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সিকে প্রধান আসামি, হারুনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার পরপরই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আবুল খায়েরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৩টার দিকে চরক্লার্ক ইউনিয়ন থেকে মেহেরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। মেহেরাজ একই এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে।
এসপি বলেন, হারুনের সহযোগিতায় প্রথমে আবুল খায়ের মুন্সি ওই নারীকে খাট হতে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে পা বেঁধে ধর্ষণ করে। এরপর হারুন ওই নারীকে ধর্ষণ করে। মেহরাজ পাশের রুমে থাকা ওই নারীর ১২ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় তাদের কানে থাকা স্বর্ণের দুল ও ঘরে থাকা নগদ টাকা নিয়ে যায়। পরে মেয়ের হাতের বাঁধন খুলে দেয় এবং ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি-ধমকি দেয়।
তিনি আরও বলেন, মূলত হারুন গৃহবধূর বসতঘরে মালামাল আছে বলে মেহেরাজকে চুরি করতে উদ্বুদ্ধ করে। মেহরাজ রাজী হলে সিধ কেটে ঘরে প্রবেশ করে। প্রবেশের পর হারুনের সঙ্গে মুন্সি মেম্বরকে দেখে মেহরাজ অবাক হয় এবং বুঝতে পারে ধর্ষণ করতেই তাকে দিয়ে চুরির ঘটনাটি সাজিয়েছে। আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। সেখানে রিমান্ড প্রার্থনা করে তথ্য যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাকি আসামি হারুনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। তাকে ধরতে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) বিজয়া সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) নাজমুল হাসান রাজীব, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল সার্কেল) নিত্যানন্দ দাস, চরজব্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামসহ জেলায় কর্মরত সংবাদ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে চরওয়াপদা ইউনিয়নে চরকাজী মোখলেছ গ্রামের একটি বাড়িতে চোর দল সংঘবদ্ধভাবে ওই গৃহবধূকে (৩০) ও তার মেয়েকে (১২) ধর্ষণ করে। এ সময় ঘর থেকে দুটি নাকফুল, কানের দুল এবং নগদ ১৭ হাজার ২২৫ টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীর দিনমজুর স্বামী কাজের জন্য ওই রাতে বাইরে থাকায় তিনি তার তিন সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে একা ছিলেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই ধর্ষণের পরিকল্পনা সাজান আসামিরা।
সুবর্ণচর উপজেলাটি গণধর্ষণের জন্য দেশব্যাপী বারবার আলোচনায় আসছে। এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস ওই দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও করা হয়।
হাসিব আল আমিন/আরকে