বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই বাড়ছে শীত
পৌষের শেষ দিক থেকেই এবার জেঁকে বসে শীত। মাঘে এসেও অব্যাহত রয়েছে শীতের দাপট। তীব্র থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাট। গত এক সপ্তাহ ধরে এ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। টানা শৈত্যপ্রবাহে এ জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত।
শীতের এই মৌসুমে গত তিন দিন তাপমাত্রার পারদ ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে এসেছে। এই তিন দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকছে রাতে। আর দিনের ঝলমলে রোদ কিছুটা গরম আবহাওয়া দিচ্ছে। তবে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই বাড়ছে শীত।
বিজ্ঞাপন
লাল মিয়া নামের এক পথচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার খুবই শীত। আর রাতে প্রচণ্ড শীত নামে। কয়েক দিন আগে সারাদিন রোদের দেখা যেত না, কুয়াশা থাকতো। এখন অবশ্য সকাল হলে রোদ উঠছে।
শীতের কারণে গত ২১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি ও ২৮ জানুয়ারি জয়পুরহাটের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আর মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি বন্ধ থাকার পর দিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২৮ জানুয়ারি থেকে খোলা হয়। আর আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) থেকে জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাধ্যমিক ও সকাল ১০টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলবে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে।
এদিকে ঠান্ডাজনিত রোগে জয়পুরহাটের সব হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও গত দুই দিন ধরে রোগী কমতে শুরু করেছে।
জেলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার শীতের তীব্রতা থাকলেও হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে রোগী ভর্তি কম হয়েছে। অধিকাংশ রোগী বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। গত কিছুদিন আগে দিনে হাসপাতালে সব মিলিয়ে ৪৫০ জন রোগী ভর্তি থাকলেও এখন তা কমে এসেছে। এখন ৩০০ জনের মতো রোগী আছে। মানুষ এখন অনেকটাই সচেতন, শীতের কাপড় পরার কারণে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী কম।
জয়পুরহাটের পার্শ্ববর্তী নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অফিসে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর গতকাল রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ২১ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২২ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৩ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ২৫ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৬ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৭ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২৮ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই ৮ দিনের মধ্যে ৭ দিন বাতাসের আর্দ্রতা শতভাগ থাকলেও ২২ জানুয়ারি ছিল ৮৭ শতাংশ।
জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতের এই মৌসুমে শীতার্তদের মাঝে সরকারিভাবে সাড়ে ২২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শিশু ও বয়োজেষ্ঠ্যদের মাঝে ৯০০ পিস সোয়েটার দেওয়া হয়েছে। আর শুকনো খাদ্য দেওয়া হয়েছে এক হাজার প্যাকেট। তাছাড়া বিতরণ করা হয়েছে ৭৪ টন চাল।
চম্পক কুমার/এমজেইউ