কিশোরগঞ্জে নানা ধরনের শীতকালীন সবজির চাষ হয়ে থাকে। মুলা, গাজর, শিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির চাষ হয় এ জেলায়। তবে এবার খেতে দেখা মিলেছে একটু ব্যতিক্রমধর্মী রঙিন ফুলকপির। হলুদ রঙের ব্যতিক্রমী এই ফুলকপি কোনো রকম কীটনাশক ছাড়াই চাষ হচ্ছে। 

সাদা ফুলকপির চেয়ে পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও সুন্দর। শুধু জৈব সার ব্যবহার করেই এই ফুলকপি চাষ করা যায়। আর তাতেই সারা ফেলেছেন কিশোরগঞ্জ পাকুন্দিয়া উপজেলার আবুল হাসিম নামের এক কৃষক। উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড় আজলদী এলাকায় প্রথমবার পরীক্ষামূলক এই শীতকালীন সবজি চাষ করে পেয়েছেন সফলতা। হলুদ ফুলকপি নিয়ে এরি মধ্যে অন্য কৃষকদের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ভারতে ও চীনে এ জাতের ফুলকপি সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। অন্য ফুলকপির মতো একই পদ্ধতিতে এই ফুলকপিও চাষ করা হয়। খরচ যেমন কম তেমনি সাধারণ ফুলকপি থেকে আরও কম সময়ের মধ্যে বাজারজাত করা যায়। পাশাপাশি শুধু জৈব সার ব্যবহার করেই এই ফুলকপি চাষ করা যায়। স্থানীয় হাটবাজারে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা।

ষাটোর্ধ্ব কৃষক আবুল হাসিম বলেন, ‘আমি ২০ শতাংশ জায়গায় এই ফুলকপি লাগিয়েছি। আশা করি এক লাখ বিশ হাজার টাকায় বিক্রি করবাম। পরবর্তী সময়ে আল্লাহর রহমতে এটার আবাদ আরও বাড়ায়াম। সরকারি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে আল্লার রহমতে করছি। তে আল্লার রহমতে ভালোই হইছে। সমস্যা নাই সামনের বছরে আরও বাড়ায়া করবার চেষ্টা করবাম। রঙিন ফুলকপিটা আল্লাহর রহমতে অল্প সময়ের মধ্যে হয়ে যায়গা। আমি ২০ শতাংশের মধ্যে ২০০০ চারা লাগাইছি। অনেক মানুষ আইসা তামশা দেখতেছে। মানে ছবি টবি তুলতেছে ভালোই হইছে।’

জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নতুন ‘ক্যারোটিনয়েড’ জাতের হলুদ ফুলকপির বীজ সংগ্রহ করে এগুলোর চারা করা হয়েছে। এরপর জৈব সার, পোকাদমনে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। চারা রোপণের ৬৫ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে জমিতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফসল পাওয়া যায়। এই ফুলকপি বাজারে নেওয়া মাত্রই বিক্রি হয়ে যায়। দামও ভালো পাওয়া যায়।

ফুলকপি দেখতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এই ফুলকপিটা ইউটিউবে দেখেছিলাম। শুনছি কৃষি অফিস থেকে এক ধরনের রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়েছে। এইজন্য আমরা আসছি দেখতে আসছি। এসে দেখি আসলেই তো হুবহু এক রকম। আর এইটার নাকি বাজারেও অনেক বেশি চাহিদা। বাংলাদেশ কৃষি অফিসকে অনেক ধন্যবাদ জানাই এটা মানুষের কাছে প্রচার করার জন্য। আর এটা আমরা কিনতেও আসছি পিস হিসেবে। এটা বাড়িতে নিয়ে মানুষকে দেখাব। এছাড়া ফটো তুলার জন্য আসছি। কারণ অনেক সুন্দর কপি হইছে।

উপজেলা কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার চন্ডিপাশা ব্লক এ এই রঙ্গিন ফুলকপিটা আবাদ করেছি এই রঙিন ফুলকপিটা অত্যন্ত সুন্দর ও কালারফুল হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এসে ভিড় করছে, ছবি ওঠাচ্ছে। এই ফুলকপিটা এ বছর অনেক কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলছে। এই ফুলকপিটা বাজারে অনেক চাহিদা। এছাড়া এলাকার অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছে আগামীতে এই ফুলকপিটা তারা আবাদ করবে। এই ফুলকপিটা অন্যান্য কপির মতোই আবাদ করা যায়। জৈব সার ব্যবহার করে ও কম পরিমাণে রাসায়নিক সার দিয়ে এটি আবাদ করা হয়েছে। আমি মাঠ থেকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কিভাবে সুন্দরভাবে চাষাবাদ করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এই ফুলকপিটা কালারফুল হওয়ার কারণে বাজারে এটার আকর্ষণ আছে। বিঘা প্রতি কৃষকরা যদি এটা আবাদ করতে পারে তাহলে দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবে। বিশেষ করে কম সময়ে এই ফুলকপিটা আবাদ করা যায় মানে উত্তোলন করা যায়। বিষমুক্ত হওয়ায় এই ফুলকপিটা খেতেও খুব সুস্বাদু।

মাস্টার্সে পড়ুয়া তরুণ উদ্যোক্তা আকরাম হোসেন বলেন, আগে যুবকদের কৃষির প্রতি অনাগ্রহের কারণে বর্তমানে সরকার কৃষি আধুনিকরণ করেছে। ফলে আমরা এখন কৃষি উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হয়ে উঠছি। বেকার না থেকে কর্মসংস্থান বাড়ছে। রঙিন ফুলকপির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ দেখে আমি চিন্তা করেছি সামনের বছর থেকে বেশি করে রোপণ করব। 

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নূরে আলম জানান, শীতকালে অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজি পাকুন্দিয়া উপজেলার চলতি মৌসুমে ২শ হেক্টর জমিতে ফুলকপি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৮ হেক্টর জমিতে আমরা রঙিন ফুলকপির আবাদ করেছি। রঙিন ফুলকপি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর এবং ভোক্তা পর্যায়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় পাশাপাশি সাদা কপির চেয়ে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আমাদের কৃষি বাজারে সাধারণ ফুলকপি যেখানে ৪০ টাকা ৫০ টাকা বিক্রি হয় এই ফুলকপিটি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে। অধিক দাম পাওয়ার কারণে কৃষক পর্যায়ে এই ফুলকপি অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমরা আশা করছি আগামী বছর আমরা প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে এই ফুলকপি আবাদ বৃদ্ধি করতে পারব। চলতি মৌসুমে আমরা পরিবেশবান্ধব উপায়ে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের আওতায় চন্ডীপাশায় আমরা একটি প্রদর্শনী করেছিলাম। আমরা ইতোমধ্যেই রঙিন ফুলকপি বাজারে বাজারজাত করা শুরু করেছি। আশা করছি আমাদের সমগ্র উপজেলাতে কৃষক পর্যায়ে দ্রুত এই কপি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। 

মোহাম্মদ এনামুল/আরকে