হাসপাতাল থেকে ‘ফিল্মি স্টাইলে’ ধর্ষণের অভিযোগকারী তরুণীকে অপহরণ
ধর্ষণের শিকার নারীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো ওসিসি। সেখান থেকে ভিকটিমকে যেভাবে অপহরণ করা হলো তাতে আমরা আতঙ্কিত। পুরোটা সময় ওসিসির নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ সদস্যরা নীরব ছিলেন। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
খুলনায় ধর্ষণের শিকার এক তরুণীকে (২৮) হাসপাতাল থেকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) থেকে ওই নারীকে ফিল্মি স্টাইলে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.তৌহিদুজ্জামানকে আটক করেন স্থানীয়রা। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
অপহরণের শিকার তরুণী একদিন আগে ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে অনেক দিন ধরে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার। শনিবার রাত সোয়া ১১টায় ওই তরুণী নিজেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় ওসিসি থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর আগেই সেখানে উপস্থিত হন গণমাধ্যমকর্মী ও আইনজীবীরা।
বাংলাদেশ মানবাধিকবার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ওই নারীকে আইনি সহায়তা দিতে তাদের ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রোববার বিকেলে হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে যান। সেখানে অপরিচিত এক ব্যক্তি ওই নারীর ছাড়পত্র নিচ্ছিলেন। তার পরিচয় জানতে চাইলে ওসিসির দায়িত্বরত ব্যক্তিরা সবাইকে বাইরে বের করে দেন। এ সময় আগে থেকে সেখানে অপেক্ষারত ৮/১০ জন দুর্বৃত্ত ওই তরুণী ও তার মাকে ধাক্কাধাক্কি করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এছাড়া তাদের ২-৩ জন লোক সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর দ্রুত মাইক্রোবাসটি ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের শিকার নারীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো ওসিসি। সেখান থেকে ভিকটিমকে যেভাবে অপহরণ করা হলো তাতে আমরা আতঙ্কিত। পুরোটা সময় ওসিসির নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ সদস্যরা নীরব ছিলেন। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (সোনাডাঙ্গা জোন) আবু নাসের মো. আল আমিন বলেন, ওই নারীর সঙ্গে তার মা ছিল। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
তৌহিদুজ্জামানকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
শনিবার ওই নারী গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ তাকে নিজের ব্যক্তিগত অফিসে ধর্ষণ করেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনেকদিন ধরেই চেয়ারম্যান তাকে ধর্ষণ করছেন বলে অভিযোগ করেন তরুণী।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন ওই চেয়ারম্যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতরাত থেকেই ওসিসিসহ হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে অপরিচিত ব্যক্তিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। সকাল থেকে ওসিসির সামনে অবস্থান নেন ৮/১০ জন ব্যক্তি। বিকেলে অপহরণের সঙ্গে তারাই যুক্ত ছিলেন।
ধর্ষণ ও অপহরণের বিষয়ে ডুমুরিয়া থানা পুলিশের ওসি সুকান্ত সাহা বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ থানায় এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
মোহাম্মদ মিলন/এমএএস