‘তুমি কাছে আসো আমার জানের পাখি, ও জান তুমি ছাড়া আমি অসহায় হয়ে গেছি। তোমার বেটা-বেটি (ছেলে-মেয়ে) যে এতিম হয়ে গেল জানের পাখি। তোমার ছাওয়াল-পাওয়ালকে (ছেলেমেয়ে) কেডা (কে) দেখবি (দেখব)। আমার জানের ছালপালেকে (ছেলেমেয়ে) কেডা (কে) ভালোবাসবে, কেডা খেতে দেবে। আমার ছেলেপেলের দুনিয়াতে আর কেউ থাকল না।’

শনিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের পিয়াদাপাড়ার নিজ বাড়িতে এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন ছুরিকাঘাতে নিহত মামুনের স্ত্রী ময়না বেগম। এর আগে শনিবার সকাল ১০টার দিকে আড়ানী বাজারে কসাই খোকনের ছুরিকাঘাতে অপর কসাই মামুনের মৃত্যু হয়।

নিহত মামুনের স্ত্রী ময়না বেগম বলেন, আমার স্বামী অনেক ভালো মানুষ। সহজ সরল মানুষ।
তাকে যে হত্যা করেছে তার ফাঁসি চাই। আমার সন্তানরে এতিম করেছে। তারা এখন কাকে বাপ (বাবা) বলে ডাকবে। এখন এই দুইটা সন্তানের কী হবে? 

নিহত মামুনের মা সুটকি বেওয়া (৭৫) বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি খোকনের ফাঁসি চাই। খোকন মামুনের দুই ছেলেকে এতিম করেছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামুন ও খোকন পরস্পর মামাতো-ফুফাতো ভাই। একসঙ্গে তারা মাংসের ব্যবসা করতেন। কিছুদিন আগে তারা ব্যবসা আলাদা করেছেন। শনিবার দুইজনে পাশাপাশি গরুর মাংস বিক্রি করছিলেন। খোকন ৭০০ টাকা আর মামুন ৬৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করছিলেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে প্রকাশ্যে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মামুনকে আহত করেন খোকন। এরপর মামুনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

জানা গেছে, নিহত মামুনের দুই সন্তান। এর মধ্যে মেয়ে মাহিমা (৪) ও ছেলে মাহিম (১৭)। ঘটনার সময় ছেলে মাহিম মামুনের সঙ্গে ছিল। ঘটনার পর বাবা মামুনের সঙ্গে রামেক হাসপাতালে যায় মাহিম। বাবার মৃত্যুতে ছেলে মাহিমও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। 

বাঘা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। কেউ আটকও নেই। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েও অভিযুক্ত খোকনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শেষ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। 

শাহিনুল আশিক/আরএআর