মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় নয়টি যানবাহন নিয়ে রজনীগন্ধা ফেরিডুবির পর থেকে ডুবে যাওয়া যানবাহনগুলো উদ্ধারের অভিযান চলছে ধীরগতিতে। বেশি সময় ধরে পানিতে ডুবে থাকলে ট্রাক বোঝাই পুরো মালামালই নষ্ট হয়ে যাবে। তাতে কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে আর ততক্ষণে উদ্ধার হওয়া মালামালগুলো কোনো কাজেই ব্যবহার করা যাবে না।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ৫নং ঘাট পন্টুন এলাকায় এই অভিযোগ করেন ফেরিতে থাকা ডুবে যাওয়া দুটি ট্রাকের মালিক মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, আমি খুব অসহায় অবস্থায় পড়েছি। দুটি ট্রাকে ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার মালামাল (আঁশ তুলা) ছিল। আর দুটি ট্রাকের মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা। কষ্টের বিষয় হলো, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএর কর্তৃপক্ষের কেউই আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন না। উদ্ধারের বিষয়েও কিছুই বলছেন না।

ট্রাক চালকের উদ্ধৃতি দিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ডুবে যাওয়া ফেরিটির চালক ও স্টাফরা অদক্ষ ছিল। কোনো বাল্কহেডের সঙ্গে ফেরিটির ধাক্কা লাগেনি। ফেরির তলা ফুটো হয়ে পানি ঢুকেই পদ্মা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আজ আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।

সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক লোন করে ব্যবসা করছি। ফেরিডুবির ঘটনায় ট্রাকে থাকা সব মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়টি তো ব্যাংক বুঝবে না। সরকার যদি আমাদের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখে তাহলে হয়তো এই ক্ষতির কিছুটা লাঘব করতে পারবো।

কুষ্টিয়া জেলা শহরেই বসবাস করেন মিজানুর রহমান। পারিবারিকভাবেই ৩৪ বছর ধরে ব্যবসা করছেন তিনি। আঁশ তুলার ব্যবসা ছাড়াও তার অটোরাইস মিল ও ফ্লাওয়ার মিলের ব্যবসা রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাকের চালক আশিক বলেন, ডুবে যাওয়া ট্রাকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল (আঁশ তুলা) ছিল। ট্রাকটি উদ্ধার হলেও সব মালামালই নষ্ট হয়ে গেছে। আর ট্রাকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার মালিকও এখানে আসছে। ফেরি স্টাফদের দায়িত্বহীনতার কারণে আজকে আমাদের এমন ক্ষতি হয়ে গেল। কর্তৃপক্ষ তো আমাদের ক্ষতিপূরণ দেবে না। গতকাল বুধবার সকালে ফেরি ডুবেছে, আর আজকে বিকেল চারটার দিকে আমার ট্রাকটি উদ্ধার করা হলো। ধীরগতিতে উদ্ধার অভিযান চলার কারণে ট্রাকের লাখ লাখ টাকার মাল নষ্ট হলো।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাকচালক মজনু মিয়া বলেন, ফেরি ডোবার সময় জীবন বাঁচাতে প্রচন্ড শীতের মধ্যেও নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়েছি। গাড়িতে থাকা সব কাগজপত্র পানিতে ভেসে গেছে। আমার ২১ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ১৬ হাজার টাকা তারা (কর্তৃপক্ষ) উদ্ধার করে দিছে। ফেরির তলা ফেটে পানি ঢুকে নদীতে তলিয়ে যায় ফেরিটি। কিন্তু ফেরি কর্তৃপক্ষ যদি আগে থেকেই চেষ্টা করতো তাহলে আমাদের এমন ক্ষতি হতো না।

এদিকে ফেরিডুবির দ্বিতীয় দিনে ডুবে যাওয়া ফেরি থেকে একটি ট্রাক উদ্ধার করে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তমের কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছে যানবাহন উদ্ধারে যোগ দেয় রুস্তম। পরে বেলা ২টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজাও যুক্ত হয় সেই উদ্ধার অভিযানে। তবে পদ্মায় তলিয়ে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা উদ্ধারের সক্ষমতা নেই উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তমের। কারণ এ দুটি জাহাজের সক্ষমতা ১০০ টন। আর রজনীগন্ধা ফেরিটির ওজন ২৫০ টন। পানির নিচে দীর্ঘ সময় ডুবে থাকার কারণে ফেরিতে পলি মাটি আর ট্রাক থাকার কারণে এটির ওজন বেড়ে প্রায় ৪০০ টন হয়েছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক শাহ জাহান।

তিনি বলেন, উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের সক্ষমতা ২৫০ টন। তবে প্রত্যয়ের সঙ্গে হামজা ও রুস্তম সহযোগী হিসেবে কাজ করলে হয়তো আমরা ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরিটি উদ্ধার করতে পারবো।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান এ কে এম মতিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রজনীগন্ধা ফেরিটি কোনো বাল্কহেড বা অন্য কোনো নৌযানের ধাক্কায় ডুবেনি। ঘটনার পর আমি ফেরি মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, ফেরিটিতে হয় তো বা কোনো ক্রটি থাকতে পারে। ফেরির নিচের অংশ দিয়ে পানি প্রবেশও করতে পারে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মূল কারণ বলতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, ফেরিডুবির দুইদিনে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তমের মাধ্যমে তিনটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে। আর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় আজ রাত ১০টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছাবে। এরপর আবহাওয়া ভালো থাকলে রাতেই ফেরি উদ্ধার অভিযান আমরা শুরু করবো, না হলে আগামীকাল শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকালের দিকে প্রত্যয়, হামজা ও রুস্তমের সমন্বয়ে ফেরি উদ্ধার অভিযান শুরু করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত ফেরির ইঞ্জিন চালক হুমায়ুন নিখোঁজ রয়েছেন। তার সন্ধানে আজ সকাল থেকেই ফায়ার সার্ভিস ও নৌ বাহিনীর ডুবুরি দল কাজ করছে।

এমএএস