টানা তীব্র শীতে বিপর্যস্ত দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। তাপমাত্রা উঠানামা ও টানা ঘন কুয়াশার কারণে পাল্লা দিয়েছে বেড়েছে মানুষের নানান শীতজনিত রোগ। সেই সেঙ্গ দেখা দিয়েছে কৃষি ফসল নষ্ট হওয়ার শঙ্কা।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগে ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সোমবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার সকালে তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্যটি ঢাকা পোস্টকে জানান জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৫ জানুয়ারি ১০.২ ডিগ্রি, ১৪ জানুয়ারি ৮.৮ ডিগ্রি, ১২ জানুয়ারি ১১.৯ ডিগ্রি, ১১ জানুয়ারি ১২.২ ডিগ্রি, ১০ জানুয়ারি ১২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। জানুয়ারিতে ৮ থেকে ১১ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ায় শীত দুর্ভোগে পড়েছেন এ জেলার মানুষ থেকে সব শ্রেণির জীবরা।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই মেঘ-কুয়াশায় আবৃত এ জেলা। বৃষ্টির মতো ঝরছে হিমেল শিশির। রাতভর ঝরে কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বরফ শিশির। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। প্রয়োজনের বাইরে ঘর থেকে শহরের মানুষজন বের না হলেও জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেরিয়েছেন।

এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের পেশাজীবীর মধ্যে পাথর-চা শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যানচালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রমজীবীরা বিপাকে পড়েছেন। শীতের কারণে কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। বিপাকে পড়েছেন চাষিরাও। তারাও ঠান্ডার প্রকোপের কারণে খেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। 

পাথর শ্রমিক, দিনমজুর ও ভ্যানচালকরা জানান, প্রচন্ড শীত। ঘন কুয়াশার মধ্যে জীবিকার তাগিদে কাজে যেতে হচ্ছে। শীতের কারণে কাজ কামও কমে গেছে। কাজ করলে পেটে ভাত জুটে। পেটের ক্ষিধে তো ঠান্ডা বুঝে না। এমনিতে আয় রোজগার কম, তার মধ্যে শীতের তীব্রতা। এসব দুর্ভোগের কারণে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

শীতের কারণে কৃষি আবাদে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। জনজীবনের দুর্ভোগের সঙ্গে চরম বিপাকে পড়েছে আলু চাষিরা। তীব্র শীতের কারণে খেতের আলুতে ছত্রাকের আক্রমণ বেড়েছে। পাতা কুকড়ে যাচ্ছে। অতি মাত্রায় শীতের কারণে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।  চাষিরা বলছেন, সমস্যা মোকাবেলা করতে গিয়ে ২-১ দিন অন্তর অন্তর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। চলতি বছর জেলায় ৯ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে শীতের কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।

জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন এ জনপদ। ঘন কুয়াশার কারণে দেখা মিলছে না সূর্য। তবে গতকাল বেলা ১১টার পর দেখা গিয়েছিল সূর্য। তাপমাত্রাও ছিল বেশ। কুয়াশা আর উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বিকেলে সূর্য দেখা গেলেও সে রোদে ছিল না উষ্ণতা। বিকেল থেকেই আবার হিমেল বাতাস বইছে।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, শীতপ্রবণ জেলা হিসেবে প্রতি বছর পঞ্চগড়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত কম্বল বিতরণ করা হয়। এবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে এবারে শীতের শুরু নির্বাচনকালীন হওয়ায় পাঁচ উপজেলার ইউএনও এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রাপ্ত শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া বেসরকারিভাবেও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রত্যন্ত এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে আরও কম্বলের চাহিদা রয়েছে। এজন্য আরও শীতবস্ত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। নতুন করে কম্বল বা শীতবস্ত্র পাওয়া গেলে দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।

এসকে দোয়েল/আরকে