সদ্য শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-১ আসনের পরাজিত নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বকুল বলেছেন, ২০০১ সালে জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতা যাওয়ার পরও এবারের মতো পরিস্থিতি আমাদের এলাকায় দেখি নাই। সে সময় অল্প গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আমরা জেলে গিয়েছি। কিন্তু এখন অসহায় নৌকার ভোটারদের ওপর নৃশংস হামলা করা হচ্ছে। এলাকার অনেক নেতাকর্মী আজকে ঘরছাড়া।

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে নাটোরের বাগাতিপাড়ার স্যান্নালপাড়ায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পরাজিত নৌকার প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের পর দুইদিন যাবত সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হচ্ছে, এর কোনো প্রতিকার নেই। সেই কথাটা যখন আমি লালপুরের ইউএনওকে বলি, তখন ইউএনও বলেন-‘আপনারা আপনারাই তো'।

বকুল বলেন, এটাতো কোনো কথা হতে পারে না।‌ আবার নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসারের তালিকা চাইলেও তিনি (ইউএনও) একই কথা বলেন।

শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ৭ জানুয়ারি সকালে আমার নিজ এলাকা বাগাতিপাড়া কেন্দ্রে ভোট দিই। এ সময় জানতে পারি লালপুরের চংধুপইল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান রেজাউল করিমসহ তার লোকজন ঈগলের পক্ষে ভোট কেটে নিচ্ছে। তখন ওই ইউনিয়নে গিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখি আমার এজেন্টদের তারা (ঈগল মার্কার সমর্থকরা) বের করে দিয়েছে।

এরপর অন্য ইউনিয়নগুলোতেও গিয়ে দেখি নৌকার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আমি তাদের পুনরায় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করাই। আমি এক কেন্দ্র থেকে আরেক কেন্দ্রে গেলে আগের কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তাদের বলা হয় যে গণনার সময় তাদের সামনেই গণনা করা হবে। কিন্তু ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর গণনার সময় কেন্দ্র থেকেই আমার এজেন্টদের বের করে দেন ওই সকল ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসাররা। আবার অনেক কেন্দ্রে নৌকার এজেন্টদের ব্যালটের বান্ডেল চেক করে দেখতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন বকুল। 

তিনি আরও বলেন, এই আসনের ভোট পুনরায় গণনার জন্য আবেদন জানিয়েছি। সঠিকভাবে ভোট গণনা হলে অবশ্যই আমি জয়লাভ করব।

সংবাদ সম্মেলনে বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, বাগাতিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গকুল, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জয় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। অভিযোগ যে কেউ দিতে পারেন। নির্বাচনের পর দিন লালপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে আমরা সার্বক্ষণিক মাঠে ছিলাম।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) নানা অভিযোগ তুলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-১ আসনের ভোট পুনরায় গণনা জন্য জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার আবু নাছের ভূঁঞার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত পরাজিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল। 

এর আগে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ ৭৭ হাজার ৯৪৩টি ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম বকুল পান ৭৫ হাজার ৯৪৭টি। তাদের ভোটের ব্যবধান ১৯৯৬।

গোলাম রাব্বানী/আরএআর