দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রংপুর। জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের ৮৫৮টি ভোটকেন্দ্র ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে ব্যালট পেপার ছাড়া বাকি নির্বাচনী সব সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে। তবে রংপুর-১ আসনে গংগাচড়ার তিস্তা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের পাঁচটি দুর্গম কেন্দ্রে আজই পাঠানো হচ্ছে ব্যালট।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টার থেকে রংপুর সদর উপজেলা ও মহানগরীর ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে নির্বাচনী সরঞ্জাম বুঝিয়ে দেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এর আগে গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিকেল থেকে রংপুরের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার অধীনস্থ ট্রেজারি থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যবহৃত গাড়িতে করে বিভিন্ন উপজেলায় ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হয়।

জানা গেছে, ব্যালট পেপারসহ নির্বাচন সামগ্রী জেলার ছয়টি আসনের অধীন আট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিসে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হবে। নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণের আগে সকালেই ব্যালট পেপার কেন্দ্রে পাঠানো হবে। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে বিরতিহীনভাবে অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।

এদিকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো এলাকা। জেলায় এক হাজার ৬২০ জন পুলিশ সদস্য ও ১০ হাজার আনসার সদস্য ছাড়াও বিজিবি, র‍্যাব, নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত থাকছেন ভোটের মাঠে। এলাকায় টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

প্রার্থীরা বলছেন, নবীন-প্রবীণ সব শ্রেণি-পেশার ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে সব প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। বিশৃঙ্খলা করলে কেউ ছাড় পাবে না।

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন বলেন, রংপুরের সংসদীয় ছয়টি আসনের ৮৫৮টি কেন্দ্রের মধ্যে জেলা পুলিশের অধীনে ৬৫৯টি এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে ১৯৯টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জেলার ৬৫৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩১৯টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে পুলিশ-আনসারের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বিশেষ নজরদারি রাখা হবে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত টহল টিম থাকবে। একই সঙ্গে বাড়ানো হবে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ টিমের সংখ্যাও।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান জানান, নির্বাচন কমিশনার ও পুলিশের আইজিপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও  শান্তিপূর্ণ করায় বদ্ধপরিকর। এ ঘোষণার সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রংপুর মহানগর এলাকার মোট ১৯৯টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরপিএমপির ১ হাজার ১১৪ জন, পিটিসি রংপুরের ৭৮ জন, এপিবিএন’র ১৫০ জন এবং শিল্প পুলিশের ১২২ জনসহ মোট ১ হাজার ৪৬৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা-ফোর্স এবং আনসার-ভিডিপির ২ হাজার ৩৮৮ জন সদস্য মহানগর এলাকার দায়িত্ব পালন করবে।

অন্যদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর-১ আসনে ৯ জন, রংপুর-২ আসনে ৩ জন, রংপুর-৩ আসনে ৬ জন, রংপুর-৪ আসনে ৩ জন, রংপুর-৫ আসনে ৮ জন এবং রংপুর-৬ আসনে ৭ জনসহ মোট ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জেলায় মোট ভোটার ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছে ১২ লাখ ২০ হাজার ৩৯৪ জন। পুরুষ ১২ লাখ ১২ হাজার ৮৭ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ২৪ জন ভোটার রয়েছে। জেলার মোট ৮৫৮টি ভোটকেন্দ্রের ৫ হাজার ১৭৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।

রংপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে  ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলার ৮৫৮ কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনায় ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ কেন্দ্র বা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা নির্বাচন কমিশন থেকে গাইডলাইন দেওয়া আছে। আমরা সেই গাইডলাইন ফলো করবো। তা ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে যা প্রয়োজন আমরা সবই করবো, সেই প্রস্তুতি আমাদের আছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ