জায়গা বিক্রি করে নির্বাচন করছি : মমতাজ
মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম বলেছেন, এই নৌকা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার, এই নৌকা উন্নয়নের নৌকা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা গোপালগঞ্জ থেকে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন। আমি মমতাজও নৌকা নিয়েই নির্বাচন করছি। গঞ্জে গঞ্জে মিল আছে আর মার্কায় মিল আছে।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাতে হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজারে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
মমতাজ বলেন, আজকে হরিরামপুরের চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আশা জেগেছে, তারা বিল্ডিংয়ের ঘর বানাচ্ছে। চরের মানুষ বলে আপনি (মমতাজ) আমাদের বস্তা ফালাইয়া নদী ভাঙন রোধ করেছেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়াসহ অনেক উন্নয়ন করেছেন। আর ওরা (স্বতন্ত্র প্রার্থী) কয় এখানে কিছুই হয় নাই। দুই-একটা উচিত কথা কইয়া (বলে) যাই, ভোট দিলে দিয়েন, আর না দিলেও আমি আপনাদের সঙ্গেই থাকব। আমি চাই হরিরামপুরকে বাঁচাইতে, আর হরিরামপুরের দুই-একটা কুলাঙ্গার চায় নষ্ট করতে। আমি বস্তা ফেলে বেড়িবাঁধ দিয়ে ভাঙন রোধ করি, আর ওরা বাঁধের কাছেই ড্রেজিং করে বালুর ব্যবসা করে। সব কিছু কাইট্যা-কুইট্যা আমরা নৌকার মধ্যেই গুছাইয়া নৌকা নিয়াই পাড়ি দিয়া যাব।
দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন নির্বাচনে ডামি প্রার্থী থাকবে। তবে দলের মনোনয়ন না পেয়ে তারা নৌকার সঙ্গে বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আপনারা ছাড়াও তো ডামি প্রার্থী ছিল, আমরা এই আসনে ১০ জন নির্বাচন করছি। আপনাদের ডামি প্রার্থী হওয়ার দরকার কী ছিল ভাই। আপনারা নৌকার সাথে বিদ্রোহ করে প্রার্থী হয়েছেন।
মমতাজ বলেন, আপনারা পদপদবী কিনেছেন, আবার সেই পদপদবী নিয়েই নৌকার সাথে বিদ্রোহ করেছেন। এর জবাব ৭ তারিখের পর কেন্দ্রের কাছে দিতে হবে। অত ভাত ডাল দিয়া মাখাইয়েন না, এত সহজ মনে কইরেন না। শেখ হাসিনা সব কিছু দেখছেন, নজরদারিতে রাখছেন। বড় বড় সাইনবোর্ড বুকে লাগাইয়া সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়া এখন শেখ হাসিনার নৌকার বিরোধিতা করছেন। আগে ওই সাইনবোর্ডগুলো আগে টাইনা ছিঁড়বো। মনে রাইখেন বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে আপনারা বিরোধিতা করছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি আজকে নির্বাচনে আসলে আমাদের এতো পরিশ্রম করতে হইতো না। কারণ বিএনপি আমাদের ধারের কাছেই আসতে পারতো না। আজকে অবৈধ কালো টাকা নিয়া দুই-একজন নির্বাচনে নামছে। ওমুক কিনতেছে, তমুক কিনতেছে। গরু-বলদ কিনা ট্রাক ভইরা ফেলাইতেছে। সাধারণ মানুষকে কি ওরা (স্বতন্ত্র প্রার্থী) কিনতে পারছে। ওই সব গাড়িতে গরু বলদই ওঠে, মানুষ ওঠে না। একজন মানুষও কিনতে পারে নাই, একজন ভোটারকেও কিনতে পারে নাই। নৌকার পক্ষে জনগণের জোয়ার দেইখ্যা ওদের (স্বতন্ত্র প্রার্থী) মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
মমতাজ বলেন, আমি যখন শুনি মুক্তিযোদ্ধার জায়গা দখল হয়ে যায়, স্কুলের জায়গা দখল করার পাঁয়তারা চলে, প্রশিকার জয়গা দখল করার পাঁয়তারা চলে, তখন কিন্তু আমার কষ্ট লাগে। এসব কাজে বাঁধা দেই দেইখাই দুই একজন কুলাঙ্গার আমাকে দেখতে পারে না। তাদের সাবধান করে দিতে চাই, রবি চৌধুরী বলেছে, ‘১৫ বছর ধরে মমতাজ এমপি, তারপরও গান করে খায়। সে টাকার জন্য হিমশিম খায়।’ দুই দিন আগে আমার একটা জায়গা বিক্রি করে এই নির্বাচন করছি।
প্রসঙ্গত, মানিকগঞ্জর সিংগাইর, হরিরামপুর এবং সদরের তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ- ২ সংসদীয় আসন। এই আসনে মোট ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের (নৌকা) মমতাজ বেগম, স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোড়া) দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল, স্বতন্ত্র প্রার্থী (কেটলি) মুশফিকুর রহমান হান্নান, স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ চঞ্চল, স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ টুলু, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (নঙ্গর) একেএম ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (একতারা) এমএ নাহিদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের (গামছা) তানভীর হাসান, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের (ফুলের মালা) ফেরদৌস আহম্মেদ আসিফ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের (ডাব) মো. জাকির হোসেন।
আসনটিতে মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ১১৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৩ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৩ জন।
সোহেল হোসেন/আরএআর