এলাকার উন্নয়ন করেছি, মানুষ আমাকেই চাইবে : এমপি নুরুল ইসলাম
বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনে এখন ভোটের উৎসব আমেজ। প্রার্থীরা দিনরাত উজাড় করে ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। ভোটারদের সমস্যার কথা শুনছেন। সাধ্যমতো সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছেন। ব্যস্ত সময় পার করছেন আসনটিতে গত দশ বছর ধরে প্রতিনিধিত্ব করে আসা সংসদ সদস্য (এমপি) নুরুল ইসলাম তালুকদার।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির হয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে লাঙ্গল প্রতীকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপন
এমপি নুরুল ইসলাম বর্তমানে জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রাদেশিক বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে উঠা মো. নুরুল ইসলাম তালুকদারের পৈতৃক বাড়ি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুনাহার ইউনিয়নের বড়নীলাহালী গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল থেকে গণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। নুরুল ইসলাম তালুকদার পেশায় আইনজীবী। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বঙ্গবন্ধু 'ল' কলেজে শিক্ষকতা করেছেন।
নুরুল ইসলাম তালুকদার রাজনীতির গোড়াপত্তন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাবেক রাষ্ট্রনায়ক পল্লীবন্ধু এরশাদের একান্ত আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয়।
১৯৮৮ সালে বগুড়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা এবিএম শাজাহান। তার পরে আসনটি দীর্ঘদিন বিএনপির দখলে ছিল। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আসনটি ফের জাতীয় পার্টি পুনরুদ্ধার করে।
এবার প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন এমপি নুরুল ইসলাম তালুকদার। প্রতিদিনই আসনটির বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন তিনি। ভোটারদের কাছেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরু থেকেই বগুড়া-৩ আসনের প্রত্যন্ত গ্রামের অবহেলিত মানুষদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন তিনি। দুই উপজেলার রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট সংস্কারসহ নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো, চলাচলের অনুপযোগী রাস্তা উন্নয়নসহ দুই উপজেলায় শতাধিক রাস্তা নির্মাণ করেন। এর মধ্যে দুপচাঁচিয়া উপজেলার ৮০টির বেশি রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার করেছেন সংসদ সদস্য। আর আদমদীঘি উপজেলার গ্রামীণ রাস্তাসহ ৭০টি রাস্তার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
শুধু তাই নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, একাডেমিক ভবন নির্মাণ, আইসিটি ভবন নির্মাণসহ শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করেন তিনি।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমপি নুরুল ইসলামের হাত ধরে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুপচাঁচিয়ার বড়নিলাহালী বেড়াগ্রাম কলেজ, কোলগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, উনাহত সিংড়া হাইস্কুল ও মাদরাসা, তালোড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আলতাফনগন মোহাম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, চাপাপুর জালাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ, কুন্দগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন।
আদমদীঘির নশরৎপুরের বৃদ্ধ মহসীন আলী বলেন, আমাদের এলাকার অনেক রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা কাদায় ভরে যেত। এমপি নুরুল ইসলাম সেই রাস্তা পাকা করেছেন।
দুপচাঁচিয়া উপজেলার আব্দুল মান্নান জানান, নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি এলাকার স্কুল-মাদরাসা উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ভালো কাজ করেছেন। শুধু তাই নয়, অনেক নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে সেলাই মেশিন দিয়েছেন। এসব উন্নয়নের কাজ তার একক অবদান।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বড় কথা নুরুল ইসলাম এক কথায় সরল, সাদামাটা মানুষ। তিনি কখনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিজেও ছিলেন না। কাউকে প্রশ্রয়ও দেননি। আর তার কাছে যেতে কারও মাধ্যম হয়ে যেতে হয় না।
ভোটের মাঠে কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন না এমপি নুরুল ইসলাম তালুকদার। তিনি বলেন, আমাদের নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরে আমার রাজনীতির শুরু। তার দেখানো পথেই আমরা আজও চলছি। মহাজোট থেকে মনোনয়ন পেয়েছি। ভোটে আর কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বি ভাবার মতো অবস্থা নেই।
লাঙ্গলের এ প্রার্থী বলেন, আমার এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছি। মানুষ আমাকেই চাইবে। দশ বছর আগে আমি এমপি হওয়ার আগে অনেক এলাকার রাস্তা-ঘাট ছিল না। আমি সেই রাস্তা করেছি। আপনারা ঘুরে ফিরে দেখতে পারেন। অনেক রাস্তা পাকা হয়েছে। দশ বছরে অন্তত ৯০টি রাস্তার কাজ হয়েছে। মসজিদ, মন্দির পাকাকরণ করেছি।
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, আমার এই দশ বছরে আমার দলের বা অন্য কেউ কোনো প্রকার চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে পারেনি। কোনো ভূমিদস্যুতা হয়নি। এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। অনেক এলাকার কালভার্ট, রাস্তা উন্নয়ন করতে হবে। আগামীতে নির্বাচিত হলে সেই কাজগুলো সম্পন্ন করবো।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মোট ১২ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিন নেতাসহ মোট ৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আর বাকিরা বিভিন্ন দলের। বগুড়া-৩ আসনে নৌকা থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন আদমদীঘি উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু। কিন্তু মহাজোটের আসনের সমীকরণে শরীক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এজন্য রাজু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তবে তার ছেলে আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক খান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছেন ভোটের মাঠে।
এ ছাড়া আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অজয় কুমার সরকারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আসনটিতে। তার প্রতীক কাঁচি। বগুড়া-৩ আসনটিতে আওয়ামী লীগের আরেক নেতা ফিরোজ স্বাধীনও ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে নেমেছেন।
জোটের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হওয়ায় প্রচারণার শুরুর দিকে বেশ কিছু সংকট দেখা দেয় বগুড়া-৩ আসনে। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম তালুকদারের পক্ষে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগের একাংশ। ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের পূর্বাশা কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মীর সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২২ হাজার ১৬৭ জন। এর মধ্যে দুপচাঁচিয়ায় মোট ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৭৬ হাজার ৭৮৩ জন এবং নারী ৭৭ হাজার ২৯৬ জন। ভোটকেন্দ্র ৫৭ টি।
আদমদীঘি উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৮৮ জন। যার ৮৪ হাজার ১২৮ জন পুরুষ এবং ৮৩ হাজার ৯৬০ জন নারী। এই উপজেলায় ভোটকেন্দ্র আছে ৬০টি।
আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/এমএএস