ফরাসি চিকিৎসক ম্যাথিউ জামলেটের উদারতায় বাংলাদেশি যুবক ইব্রাহিমের শেষ ইচ্ছাপূরণ হলো। ভিনদেশী এই চিকিৎসক নিজের দায়িত্বে ক্যান্সার আক্রান্ত ইব্রাহিমকে পৌঁছে দিয়ে গেছেন ভোলার চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে। 

এই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাওলাদার বাড়ির কাঞ্চন হাওলাদারের ছেলে ইব্রাহিম উচ্চশিক্ষা নিতে ফ্রান্সে পাড়ি জমান ২০২২ সালের শুরুতে। সেখানে ৫ মাসের ব্যবধানে ইব্রাহিমের শরীরে ধরা পড়ে ক্যান্সার। 

ইব্রাহীম বলেন, ফ্রান্সে যাওয়ার পাঁচ মাস পর পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাই। ব্যথা কমছিল না। পরে আরও দুই মাসের মাথায় টেস্টে ধরা পড়ে আমার লিভার ক্যান্সার। এরপর ফ্রান্সের ড. ম্যাথিউ জামলেটের অধীনে প্রায় এক বছর চিকিৎসা নেই। কিন্তু কিছুতেই ভালো হচ্ছিলাম না। দিন দিন শরীরের অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকও তার হাল ছেড়ে দেন। আমাকে সরাসরি বলেই দেন আমি আর বেশিদিন বাঁচব না। 

নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে জীবনের শেষ ইচ্ছা জাগে মা-বাবার কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার। আমাকে দেশে নিয়ে আসার কেউ ছিল না। শেষে আমার ইচ্ছার কথা ডা. ম্যাথিউ জামলেটকে জানাই। তিনি স্বেচ্ছায় আমাকে দেশে এনে মা-বাবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার আগ্রহ দেখান। তিনি প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ২০ ডিসেম্বর আমাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন। 

ইব্রাহিমের বাবা কাঞ্চন হাওলাদার বলেন, আমার ছেলে অত্যান্ত মেধাবী। জীবনের সব আয় আর ঋণ নিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমার ছেলেটা আজ মৃত্যু পথযাত্রী। দুনিয়ায় এখনো ভালো মানুষ আছেন। ডা. ম্যাথিউ জামলেট না থাকলে হয়তো আমার ছেলেকে আর কোনোদিন ফিরে পেতাম না। তিনি ঢাকায় এসে আমার ছেলেকে পৌঁছে দিয়ে চলে গেছেন। শুক্রবার ইব্রাহিমকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসি। 

ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আমজাদ হোসেন বলেন, ইব্রাহিমকে খুব অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে আনা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ফ্রান্সের ডাক্তার না নিয়ে এলে ওর হয়তো মা-বাবার মুখ দেখা হতো না। ওরা চারভাই পাঁচ বোন। তারপরও দোয়া করি সুস্থ হয়ে উঠুক ইব্রাহিম।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে