নারী ভোটার বেশি, ভোটে আগ্রহ নেই অধিকাংশের
রংপুর জেলায় পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার বেশি। ভোটার বাড়লেও ভোটকেন্দ্র বিমুখ হয়ে পড়ছেন নারী ভোটাররা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ক্রমে ভোটের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ততা হারিয়েছেন তারা। আর সে আগুনে এবারেও ঘি ঢেলেছে বিএনপিসহ সমমনা দলের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত। এতে করে ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আগাম শঙ্কা চেপে বসেছে জেলার এবারের মোট ভোটের অর্ধেকেরও বেশি ভোট ব্যাংকে।
সরকারবিরোধী আন্দোলন, অগ্নিসন্ত্রাস, গণপরিবহনে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ পুড়িয়ে হত্যাসহ রাজনৈতিক ভয়ভীতি চেপে বসেছে ভোটারদের মনে। সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এক পক্ষীয় নির্বাচনকেও ভোটের প্রতি অনাগ্রহের আরেকটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেকে। তিস্তা-ঘাঘট-যমুনেশ্বরী-করতোয়াসহ অসংখ্য নদ-নদী বেষ্টিত রংপুর জেলার সংসদীয় ছয়টি আসনের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জনসংযোগে নেমেছেন। ভোটারদের কাছে টানতে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। ভোটের মাঠে প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ ও মিছিলে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ঘুম নেই তাদের কর্মী-সমর্থকদেরও। শহরতলী থেকে গ্রামের হাট-বাজার সবখানে নির্বাচন নিয়ে চলছে নানান রকম বিশ্লেষণ। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও নানান হিসেব কষতে শুরু করেছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে ‘ভোট উৎসবের’ বৈরী পরিবেশ আর ভোটদানে নারীদের আগ্রহে কমতি থাকায় চিন্তিত প্রার্থীরা। একারণে ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনার তোড়জোড়ে কমতি নেই কারো কারো।
এবার রংপুর জেলার ছয়টি আসনে ১২টি রাজনৈতিক দলের প্রতীকে ২৭ জন প্রার্থী থাকলেও প্রচারণায় মাঠ সরব করে রেখেছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বাকি দলগুলোর প্রার্থীদের তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই। কিছু কিছু প্রার্থীদের এখনো ভোটের মাঠে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত চার স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাইরে আরও ৫ জনসহ জেলায় এবার মোট প্রার্থী ৩৬ জন। এর মধ্যে দুটি আসনে রয়েছে মাত্র তিন নারী।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন সংসদীয় আসন ঘুরে ভোট নিয়ে অধিকাংশ নারী ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ-উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। বরং অতীতের হরেক ভীতিকর ঘটনার স্মৃতিচারণ করে এবারও অপ্রীতিকর ঘটনার আগাম আশঙ্কায় তারা ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। নতুন ভোটার হওয়ার পর থেকে ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় মুখিয়ে থাকা নবীন নারী ভোটারদের উৎকণ্ঠারও কমতি নেই নিরাপদ ভোটের পরিবেশ নিয়ে।
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের ভোটার উম্মে কুলসুম। শঠিবাড়ি বাজার এলাকায় তার সঙ্গে কথা হলে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ভোটের সময় অনেক জায়গায় মারামারি, হামলা-ভাঙচুর হয়। নির্বাচন এলেই টিভি চ্যানেল আর পত্রিকায় শুধু সহিংসতার খবর থাকে। এসব খবর জানার পর কি ভোটকেন্দ্রে যেতে মন চায়? কয়েকদিন আগে রংপুর শহরে একটা কাজে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার কথা শুনেছি। আমাদের মিঠাপুকুরেও দু-একজন প্রার্থী বিভিন্ন ভয়ভীতি সৃষ্টি করছে। এখন তো ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় লাগে, কখন কী হয়।
একই আশঙ্কা থেকে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিজের অনীহার কথা জানান রংপুর-৪ আসনের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর গ্রামের সাজেদা বেগম। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই ভোটার বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে আমি কোনো নির্বাচনেই ভোট দিতে যাইনি। কেন জানি এখন আর ভোটকেন্দ্রে যেতে মন চায় না। প্রার্থীদের কথাবার্তা আর পরিস্থিতি দেখে মনে হয় ভোট ছাড়াও জেতা সম্ভব। আগে আমরা দেখেছি ভোট মানে উৎসবমুখর পরিবেশ। আর এখনকার ভোটে শুধু মনের মধ্যে ভয় কাজ করে। যদি ভোটের দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তাহলে ভোট দিতে যাব।
কুলসুম আর সাজেদার মতো হাজার হাজার ভোটার এখন ভোটবিমুখ। যার প্রমাণ মিলেছে সংসদের উপনির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে। ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ ছিল না। ভোট পড়েছে ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর আগে ২০১৭ সালে এই সিটির নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এবার নতুন ভোটার বাড়লেও ভোটার উপস্থিতির হার কম ছিল।
এদিকে ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী রংপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ৩১ লাখ ৬৯ হাজার ৬১৫ জন। এর মধ্যে নারী ১৬ লাখ ৬৭ জন এবং পুরুষ ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৮ জন। সবশেষ ভোটার তালিকা অনুসারে জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৫০৫ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার রয়েছে ১২ লাখ ২০ হাজার ৩৯৪ জন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী জেলার বিভিন্ন সংস্থার মতে, প্রতি বছর নারী ভোটার বাড়লেও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি বাড়ছে না। জাতীয় থেকে স্থানীয় সব নির্বাচনেই ভোটকেন্দ্রে লম্বা সারিতে নারীদের উপস্থিতি ক্রমেই কমে যাচ্ছে। তবে ভোট দেওয়া নারী-পুরুষের পৃথক সংখ্যা নিরুপণ করার ব্যবস্থা না থাকায় নারীর ভোটাধিকার প্রয়োগের সংখ্যা বা হার নির্ণয় করা যায় না।
রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ কলেজের শিক্ষক নাসিমা আক্তার জানান, সবশেষ আদমশুমারী অনুযায়ী জেলার শিক্ষার হার ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এরমধ্যে পুরুষের তুলনায় নারী শিক্ষার হার কম থাকার কারণে এখনো নাগরিক দায়িত্ব ও সচেতনতা তৈরি হয়নি। ভোট প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে তাদের সচেতনতার অভাবের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রের অস্থিতিশীল পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণেও অনেকের মধ্যে ভোটের প্রতি অনীহা রয়েছে। তবে অতীতের তুলনায় এখন প্রতিটি নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো এবং ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক সহিংসতা, নির্বাচন বর্জনের প্রবণতা আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় ভোট নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তারা।
রংপুর সরকারি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্রী মাসুমা আক্তার বলেন, ভোটারদের ওপর প্রার্থীদের আস্থা নেই। তারা রাজনৈতিক সহিংসতা, কোন্দল আর কাদা ছোড়াছুঁড়িতে লিপ্ত। ভোটারদের কাছে নির্বাচন উৎসবের, আনন্দের। অথচ এখন কোনো নির্বাচনই স্বস্তির মনে হয় না। সবসময় একটা অজানা আতঙ্ক ও ভীতি কাজ করে। এ কারণে আমার মতো অনেকে ভোট দিতে চান না।
তিস্তানদী বেষ্টিত রংপুর-১ আসনের (গঙ্গাচড়া ও আংশিক সিটি) কয়েকজন নারী ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তাদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনার প্রতি মানুষের আস্থা কমে এসেছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে মানুষ ভোট দিতে গিয়ে ভোট দিতে পারেনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়ছে। ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
মানবাধিকারকর্মী আফরোজা সরকার বলেন, নারী ভোটারদের ভোটকেন্দ্র যাওয়ার হার ক্রমশই কমে যাচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে নারী ভোটাররা অপ্রিতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে ভয় পায়। রাজনৈতিক সহিংসতা, অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াওয়ের খবরাখবরে একধরণের ভীতি তৈরি হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে নারীরা নিরাপত্তার অভাবে ঝুঁকি নিয়ে ভোট দেয়ার আগ্রহ দেখায় না। যে কারণে ভোটকেন্দ্রে নারীদের তেমন একটা উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না।
জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সাধারণ সম্পাদক মোশফেকা রাজ্জাক বলেন, এ জেলার শিক্ষার হার কম থাকার কারণে নারীরা ভোট দেওয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে না। এটা যেমন ভোট কেন্দ্রে নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ কম থাকার একটি কারণ। আবার ভোট দেওয়ার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মাঝে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এ কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো জাতীয় নির্বাচনেও ভোটাররা কেন্দ্রমুখী হচ্ছেন না।
রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী বলেন, নারী ভোটারদের ভোট দেওয়ার জৌলুস কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আগে যেখানে তারা উৎসবমুখর আনন্দঘন পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে যেতো এখন তারা ভোট দিতে যায় ভয় আর শঙ্কা নিয়ে হয়ে। আমাদের সমাজ পরিচালিত হয় পুরুষদের দ্বারা আর তাদের ইচ্ছার দ্বারাই পরিচালিত হয় আমাদের নারী সমাজ। সেহেতু তারা এখন মনে করে তাদের অধীনস্থ নারীদের ভোটকেন্দ্রে পাঠালে তারা নিশ্চিত বিপদের মুখে পড়বে সেহেতু তারা তাদের ভোটকেন্দ্রে পাঠানো থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবে। আর এসব কারণেই কমে যাচ্ছে নারী ভোটারদের অংশগ্রহণের সংখ্যা।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর মহানগর সভানেত্রী অ্যাডভোকেট রেজেকা সুলতানা ফেন্সি বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে আগে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ভোটারবিহীন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দেখে দেখে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। একরাণে দেশে এখন জাতীয় নির্বাচনেও ভোট উৎসব হয় না। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ ও জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা ফেরাতে পারলেই আবারও নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে সব শ্রেণিপেশার মানুষ ভোটকেন্দ্রমুখী হবেন।
আর এ বিষয়ে রংপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নাছিমা জামান ববি বলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ নিলে সকল শ্রেণি-পেশার ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা নির্বাচনে অংশ না নিলে ভোট প্রতিযোগিতামূলক হবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন, সরকারসহ সাধারণ জনগণও চায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক। কিন্তু কেউ ইচ্ছে করে নির্বাচনে না এসে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে জনগণই তার জবাব দিবে। তবে এখন আগের চেয়ে নারীরা ভোটাধিকার প্রদানে বেশি সচেতন। তাদের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে, শুধু কেন্দ্রমুখী করতে প্রার্থীদের উদ্যোগ নিতে হবে।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার অভাব, পাল্টাপাল্টি দোষারোপের প্রবণতা, রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অনুপ্রবেশ, সহিংসতা, ভোট বর্জনরীতি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে ইসির দুর্বলতা এবং বড় দুই দল ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভোটারদের আস্থায় চিড় ধরেছে বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।
রংপুর মহানগর সুজনের সহ-সভাপতি রুম্মানা জামান বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়ায় কমছে ভোট পড়ার হার। সেই সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে নারীদের মধ্যে বাড়ছে অনীহা। গত এক দশক ধরে বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট কম পড়ার নেপথ্যে এমন একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
রংপুর-১ আসনের বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী শ্যামলী রায় বলেন, নারী-পুরুষ সব ভোটারের উপস্থিতিই ভোটকেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশ ফেরাবে। আমি সাধারণ ভোটারদের কাছে যাচ্ছি, তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান করছি। গ্রামের সহজ-সরল নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হলেও তাদের মধ্যে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে একধরণের ভয় আর শঙ্কা রয়েছে। তারপরও আমি নারী ভোটারদের ভোট দিতে আসার জন্য বেশি উৎসাহিত করছি। একই কথা বলছেন রংপুর-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাকিয়া জাহান চৌধুরী।
এদিকে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা বলেন, ভোটার নেই মানে নির্বাচনেরও প্রাণ নেই। প্রার্থী এবং ভোটার এই দুই অংশ নির্বাচনের প্রাণ। ভোটার আনার দায়িত্ব মূলত প্রার্থীদের। ভোটার কিন্তু কমিশন এনে দেবে না। তবে এবার কমিশন ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য মাঠে নেমেছে।
সংসদ নির্বাচনে কমছে ভোটার উপস্থিতি
এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য মতে, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮৭.১৩ শতাংশ। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভোট বর্জনের নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দশম সংসদ নির্বাচন। চোখে পড়ার মতো ভোটার উপস্থিতি না থাকায় সেই নির্বাচন নিয়ে সর্বত্র প্রশ্ন ওঠে। ভোটার উপস্থিতি নেমে দাঁড়ায় ৪০.০৪ শতাংশে।
ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৩৪টি আসনে জয়লাভ করে। বিরোধী জোট নির্বাচন বর্জন করায় ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনের সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে শুধু তিনটি আসনে ভোট দিতে পেরেছেন ভোটাররা। বাকিগুলোতে নির্বাচন হয়নি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ওই নির্বাচনে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে দাবি করে নির্বাচন কমিশন। যদিও এ দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে