নৌকায় ভোট চাইতে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারের অংশ হিসেবে আজ রংপুর আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর এবং পীরগঞ্জে পৃথক নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তার। ইতোমধ্যে সভাস্থলের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে সাত স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট চাইতেই প্রধানমন্ত্রীর এ সফর।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বিমানযোগে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুরের উদ্দেশে রওনা হবেন। সেখান থেকে তিনি সড়ক যোগে তারাগঞ্জ ওয়াকফস্টেট সরকারি কলেজ মাঠে রংপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবুল কামাল মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
বিজ্ঞাপন
বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী যাবেন পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেপুরে তার শ্বশুরবাড়ি জয় সদনে। সেখানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তার স্বামী প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করে শ্বশুরালয়ে দুপুরের খাবার খাবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বিকেল ৩টায় পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত রংপুর-৬ আসনের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন শেষ হাসিনা।
এদিকে তারাগঞ্জ থেকে পীরগঞ্জে যাবার পথে মিঠাপুকুরের জায়গীরে আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রংপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাশেক রহমানের নির্বাচনী সভায়ও অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তার। সেখানেও সভামঞ্চ তৈরি করাসহ অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দলীয় প্রধানের সাক্ষাৎ পেতে উদগ্রীব রংপুরের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। পাঁচ বছর পর পীরগঞ্জে শ্বশুরালয়ে পুত্রবধূর আগমনে গোটা উপজেলায় সাজসাজ রব, চলছে পোস্টারিং ও মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারণা। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে একনজর দেখার সঙ্গে জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলের নেতারা।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম জানান, মঙ্গলবার সকালে বিমানযোগে সৈয়দপুর এসে তারাগঞ্জে দলীয় প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের জনসভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। এ সভা শেষে গ্রামের বাড়ি পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেহপুরে আসবেন তিনি। সেখানে স্বামীর কবর জিয়ারতের পর নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে সময় কাটাবেন শেখ হাসিনা। এরপর বিকেলে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভায় যোগ দেবেন।
তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনাকে বরণ এবং জনসভা সফল করতে সব প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ জনসভায় প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মিছিল স্লোগানসহ ব্যাপক লোক সমাগম ঘটবে এবং নিকটবর্তী গাইবান্ধা, দিনাজপুর ও রংপুরের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে মানুষের ঢল নামবে জনসভায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তারাগঞ্জ এবং পীরগঞ্জের জনসভাস্থল এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে জনসভাস্থল। প্রস্তুত মাঠ-মঞ্চ, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষের জন্য গাড়ি পার্কিং এবং যাতায়াতের রুট ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন উপলক্ষ্যে এবার আরও বেশি সরগরম কর্মী-সমর্থকরা। এবার প্রার্থীরা আরও বেশি সমর্থক নিয়ে জনসভাস্থলগুলোতে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে সাটানো হয়েছে ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড ও ফেস্টুন। গেট সাজানো হয়েছে পুরো জেলাজুড়ে। জনসভাস্থলে প্রস্তুত রয়েছে নৌকার আদলের তৈরি সভামঞ্চ। এসএসএফসহ রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় মাঠ ও মঞ্চ প্রস্তুত করেছেন বলে জানানো হয়েছে। মঞ্চের পাশেই করা হয়েছে মিডিয়া বক্স, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অতিথি কর্নার। সামনে থাকবে জনতা। নারীদের জন্য বাঁশের ডিভাইডার দিয়ে আলাদা করা হয়েছে স্থান।
জনসভাকে ঘিরে মাঠসহ আশেপাশের এলাকায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পোশাকি ও সাদা পোশাকের বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে সভাস্থলসহ আশপাশের এলাকায়। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে সৈয়দপুর থেকে পীরগঞ্জ পর্যন্ত সড়ক মহাসড়কগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে সাত স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে জনসভাস্থল এবং সড়ক মহাসড়কগুলোতে। পোশাকি ছাড়াও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল জানান, শেখ হাসিনা সকালে বিমানযোগে সৈয়দপুর হয়ে সড়কপথে তারাগঞ্জে জনসভা করবেন। এ ছাড়া পীরগঞ্জে যাবার পথে জায়গীরে একটি সভায় তার অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। দুপুরে ফতেহপুরের জয়সদনে অবস্থানের পর বিকেল ৩টায় পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন। পরে সড়কপথে সৈয়দপুর হয়ে বিমানযোগে ঢাকা ফিরবেন তিনি।
রংপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, গত ১৯ নভেম্বর পীরগঞ্জের নেতাকর্মীদের টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন তিনি পীরগঞ্জে আসবেন। প্রধানমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জ। তিনি রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কাজ করছেন। এরই মধ্যে সমস্ত উন্নয়ন দৃশ্যমান। আমাকে তিনি তার প্রতিনিধি হিসেবে শুধু উন্নয়ন দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়েছেন। এবারও তিনি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি তার নিজের লোকজনের কাছে সশরীরে আসছেন ভোট চাইতে। তার এই আগমন পীরগঞ্জের সকল ভোটারদের একত্রিত করেছে। তারা আমাকে সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে এবারও নির্বাচিত করবেন ইনশাআল্লাহ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জে একই মাঠে জনসভা করেছেন। তারও আগে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পীরগঞ্জের তরফমৌজা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পথসভা ও লালদীঘির ফতেহপুরের জয়সদনে কর্মীসভা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষ এ বছরের ২ আগস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় বক্তব্য রাখেন।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে রংপুর-২ আসনে আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, রংপুর-৪ আসনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রংপুর-৫ আসনে রাশেক রহমান ও রংপুর-৬ আসনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতার কারণে রংপুর-১ আসনে দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিম রাজু ও রংপুর-৩ আসন থেকে তুষার কান্তি মণ্ডলকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, রংপুর জেলার ছয়টি আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রংপুর-১ আসনে নয়জন, রংপুর-২ আসনে তিনজন, রংপুর-৩ আসনে ছয়জন, রংপুর-৪ আসনে তিনজন, রংপুর-৫ আসনে আটজন এবং রংপুর-৬ আসনে সাতজন প্রার্থী। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ