নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে জনগণের তোপের মুখে পড়েছেন নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল। তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত হয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। 

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জলঢাকার গোলমুন্ডা ও বালাগ্রাম বাজারে গণসংযোগে গেলে তোপের মুখে পড়েন তিনি। এ ঘটনার এক মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে জনসংযোগ করার সময় স্থানীয় ভোটাররা রানা মোহাম্মদ সোহেলের কাছে জানতে চান, তিনি বিগত পাঁচ বছরে এলাকার কি উন্নয়ন করেছেন, কতটা খবর রেখেছেন স্থানীয় জনগণের। আবারো কেন তাকে ভোট দেওয়া হবে। এমন নানা প্রশ্নের জবাবে রানা মোহাম্মদ সোহেলকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি দুর্নীতি যেহেতু করি নাই, টেন্ডারবাজি করি নাই, মামলাবাজি করি নাই, পয়সা নেই নাই। একটা ছুটে গেছে, যোগাযোগ রাখি নাই। সেটা কাভার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, যেভাবে তারা আশা করেছিল, সেভাবে আমি যোগাযোগ রক্ষা করতে পারি নাই। এ কারণে তাদের মান অভিমান থেকে তারা আমাকে এসব প্রশ্ন করেছেন। আমি বলেছি আগামীতে তা পূরণ করে দেব।

এদিকে রানা মোহাম্মদ সোহেলের নির্বাচনী পোস্টারে লেখা রয়েছে ‘জাতীয় পার্টি মনোনীত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ প্রার্থী। এমন লেখা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

আওয়ামী লীগের চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকার পরও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিজের পোস্টারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী উল্লেখ করায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানা নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি বরাবর অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে মার্জিয়া সুলতানা বলেন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের মাঠে থাকার পরও তিনি কীভাবে দুইটি দলের সমর্থনে প্রার্থী হয়েছেন। এ কারণে আমি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিতে বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি তারা বিষয়টি দেখবেন।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি. আর. সারোয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিনি যদি অভিযোগ দিয়ে থাকেন তাহলে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির একজন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন তিনি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

নীলফামারী-৩ আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির কারণে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন। সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল। এবারও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেলের অনুকূলে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার কারণে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা।

এদিকে এবার জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেলের বিপরীতে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য কাজী ফারুক কাদের (কেটলি)। অপর প্রার্থীরা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেল (কাঁচি), জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি মার্জিয়া সুলতানা(ঈগল পাখি), জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ শামীম (মোড়া) ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হুকুম আলী খান (ট্রাক), তৃণমূল বিএনপির খলিলুর রহমান (সোনালী আঁশ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির বাদশা আলমগীর (হাতঘড়ি)।

তবে গত ২২ ডিসেম্বর আসনের একমাত্র নারী প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানাকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ শামীম ও হুকুম আলী খান।

শরিফুল ইসলাম/আরএআর