আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটের হার প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর সবাই দেখতে পারবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, আমরা একটি ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ তৈরি করেছি। সেই অ্যাপের মাধ্যমে দুই ঘণ্টা পরপর কত শতাংশ ভোট হলো তা দেখা হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে তা দেখতে পারবেন।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ধরুন বেলা ২টায় ২০ শতাংশ ভোট হলো আর তিনটায় গিয়ে ৯০ শতাংশ হয়ে গেলো সেটা তো বিশ্বাস যোগ্য হবে না। যারা প্রার্থী তারাও এটি ট্র্যাক করতে পারবে, সাধারণ ভোটাররাও এটি ট্র্যাক করতে পারবে।

রোববার (২৪ ডিসেম্বর)  দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হলের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে জেলার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সহকারী রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মতবিনিময় শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।  

ভোট এক জায়গায় দিলে আরেক জায়গায় চলে যাবে এটি সত্য নয় জানিয়ে সিইসি বলেন, অনেককে বলতে দেখা যায় কি নির্বাচন করবো ভোট এখানে দিলে ওখানে চলে যাবে। এগুলো অবান্তর ভ্রান্ত প্রচারণা। এ ধরনের প্রচারণাকে বিশ্বাস করবেন না। এটা সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হয় আপনারা নির্বাচন কমিশনে আসবেন, আমি নিজে তদন্ত করবো কীভাবে সম্ভব হলো। প্রশাসনের ওপর আমাদের আস্থা আছে।

আচরণবিধি ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনটি হলো ভোটের দিন। ঐদিনের নির্বাচনি পরিবেশ কেমন স্বচ্ছ ছিল, দৃশ্যমান ছিল, জবাবদিহিতামূলক ছিল, সেটাই দেশবাসীর কাছে প্রতীয়মান হবে। এমনকি সেটা বহির্বিশ্বের কাছেও প্রমাণ রাখবে যা সফল নির্বাচনের প্রতীক। সর্বজনীন নির্বাচনি আস্থা হয়তোবা এখনো গড়ে উঠতে পারেনি, নির্বাচনি সংশয় এখনো কাটেনি। কিন্তু কর্ম ও সততার দ্বারা আমরা জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনি ফলাফল দিতে চাই। জনগণ ও বিশ্বের কাছে শতভাগ বিশ্বাসযোগ্য আস্থা অর্জন করতে চাই। তার জন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, একটি স্বচ্ছ, সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এমন একটি জবাবদিহিতামূলক নির্বাচন আমরা অনুষ্ঠিত করতে চাই যার পেছনে কোনো বৈদেশিক জল্পনা কল্পনা থাকবে না। দ্বিধা, প্রলোভন, অনুরোধ, অভিযোগ সবকিছুর ঊর্ধ্বে নির্বাচনি আয়োজন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বিশ্বের সম্মানিত সদস্য, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কাছে আপনার আমার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের নির্দেশনাও রয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৬টি জেলা ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোণা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের মাঠ প্রশাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসনের কর্মকর্তা, রেঞ্জ ডিআইজিসহ বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিজিবির ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, এনএসআই প্রতিনিধি, র‌্যাবের প্রতিনিধি, জেলা কমান্ডারসহ আনসার ও ভিডিপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন নির্বাচন কর্মকর্তা, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, নির্বাচনের দিনটিতে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমরা। নিরপেক্ষতা, সহনশীলতা, সহযোগিতা, সততার সহিত আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। দেশবাসীসহ বিশ্বের কাছে নির্বাচনি পরিবেশ গর্বের সঙ্গে তুলে ধরতে চাই।

এর আগে সকালে জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষ ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার মিলনায়তনে ময়মনসিংহ জেলার সকল সংসদীয় আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিইসি। জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে ৭১জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লড়ছেন।

উবায়দুল হক/এএএ