গাইবান্ধায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, ৭ দিনে শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু
গাইবান্ধায় হঠাৎ করে শীতজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শুধু গত এক সপ্তাহে জেলা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছে শিশুসহ দেড় শতাধিক মানুষ। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মোনারুল নামের আট মাসের এক শিশু ও আব্দুল হামিদ নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের দ্বিতল ভবনের মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ড রোগী দিয়ে পূর্ণ। ডায়রিয়া বিভাগের ২০ সিটের ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন শিশুসহ ৩৫ জন রোগী। এছাড়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে ৫ শিশু। এখানকার বেশিরভাগ শিশুই শীতজনিত ডায়রিয়া ও নিউমোনায়ায় আক্রান্ত। এছাড়া প্রতিদিনই জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে আসছেন নানা বয়সের মানুষ।
বিজ্ঞাপন
ডায়রিরা ওয়ার্ডের সায়রন বিবি নামে এক নারী জানান, গত বুধবার রাত থেকে আমার নাতনি সিনহার হঠাৎ করে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। পরদিন ফার্মেসির দোকান থেকে খাবার স্যালাইন ও ওষুধ কিনে খাওয়াই কিন্তু কোনো কাজ হয় না। পরে উপায় না পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করাই। গত দুই দিনের চিকিৎসায় সে আজকে মোটামুটি সুস্থ আছে।
সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপের হাট ইউনিয়নের চাঁদকরিম গ্রাম থেকে আসা মোমিনা বেগম বলেন, আমার নাতি আব্দুল্লাহর বয়স ১০ মাস। এই মাসের ১২ তারিখে সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। পরে সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করি। সেখানে দুই দিন থাকার পর অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে গাইবান্ধার সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করি। গতরাত থেকে পাতলা পায়খানা কমেছে আজকে আমার নাতি কিছুটা সুস্থ।
সদর উপজেলার মালিবাড়ী ইউনিয়নের কাবিলের বাজার এলাকা থেকে আসা জেসমিন বেগম বলেন, আমার বাচ্চার বয়স ৮ মাস। এক মাস আগেও ওকে নিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। ২০ দিন না যেতেই আজকে আবারও সকাল থেকে বমির সঙ্গে পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। তাই কোনো কিছু না ভেবে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স স্বপ্না রানী প্রামাণিক জানান, শীতজনিত কারণে শিশুরা বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার স্যালাইন, এন্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ রয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যমত শিশুসহ সব রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি।
জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত এক সপ্তাহে শিশু ও বৃদ্ধসহ দেড় শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আরও অন্তত ৩৫ জন শিশু নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মোনারুল নামের আট মাসের এক শিশু ও আব্দুল হামিদ নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তাই শীতের এই সময় শিশু ও বয়স্কদের বাড়তি যত্ন নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
রিপন আকন্দ/আরকে