জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
এক প্রহর পরেই মহান বিজয় দিবস। দিনটি উপলক্ষ্যে লাখো মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। যাদের ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলার বুকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ছে লাল সবুজের পতাকা, সেই শহীদদের স্মরণে ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে পুরো সৌধ ধুয়েমুছে চকচকে করা ও রং তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তোলার কাজ।
প্রায় এক মাস দিনরাত পরিশ্রম করে গণপূর্ত বিভাগের কর্মীরা সাজিয়ে তুলেছেন ১০৮ একর জমির ওপর নির্মিত জাতির গৌরব আর অহংকারের প্রতীক স্মৃতিসৌধ। বাহারি ফুলে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরো চত্বর। গাছের সবুজ পাতা আর লাল ফুলের সমন্বয়ে রূপ দেওয়া হয়েছে জাতীয় পতাকার।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকে বড় আকারে বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি বসানো হয়েছে। সৌধ চত্বরের চারপাশে কয়েকশ টবে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের ফুল আর পাতা বাহারের গাছ। নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার, উচ্চ মাত্রার সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডগ স্কোয়াড দিয়ে প্রতিটি স্থান তল্লাশি করছে।
বিজয় দিবস বাঙালি জাতির জীবনে একটি অবিস্মরণীয় দিন। স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড, নিজ ভাষা আর লাল সবুজের পতাকা আদায়ের দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির স্বাদ নেওয়ার দিন। তাই তো দিনটিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নিয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সাজসজ্জার কাজ শেষ করতে পারায় সন্তুষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া দেশের সূর্য সন্তানদের কবর ও স্মৃতিস্তম্ভের পরিচর্যা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে পেরে গর্বিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
পরিচ্ছন্নতা কর্মী মান্নান বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আমরা প্রায় এক মাস ধরে ধোয়া-মোছা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছি। আমরা দেশের জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের খেদমতে কাজ করতে পেরে গর্বিত।
৫১তম মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে লাখো মানুষের ঢল নামবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
এদিকে বিজয় দিবসের একদিন আগেই জাতীয় স্মৃতিসৌধের সব ধরনের কাজ শেষ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। স্মৃতিসৌধের ফটক থেকে মিনার পর্যন্ত পুরো এলাকা ধুয়েমুছে চকচকে করা হয়েছে। সৌধ চূড়া পরিষ্কার করার কাজ শেষ। লেকও পরিষ্কার করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে লাল-সবুজ আলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এখন চলছে নবম পদাতিক ডিভিশনের নেতৃত্বে তিন বাহিনীর সদস্যরা কুচকাওয়াজের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এ ব্যাপারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও দেশিবিদেশি কূটনৈতিকরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এ উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী কাজ করে ধোয়া-মোছা, ফুল দিয়ে সাজানো, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১০৮ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই স্মৃতিসৌধে প্রতি বছর বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
মাহিদুল মাহিদ/এএএ