এবার কিছুটা আগেই জেঁকে বসেছে শীত। সারাদেশের মতো রাজবাড়ীতে দিন দিন বাড়ছে শীতের তীব্রতা। এতে শীতের পোশাকের চাহিদা বাড়ায় জমে উঠেছে ব্যবসা। সামর্থ্যবানরা শহরের অভিজাত বিপণী বিতান থেকে পোশাক কিনলেও নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ কমদামে শীতের কাপড় কিনতে ছুটছেন রেলগেট এলাকায় অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা হকার্স মার্কেটে।

প্রতিবছর শীতের সময় রাজবাড়ী জেলা শহরের ১নং রেলগেট এলাকায় রেললাইনের ওপর পুরাতন জামাকাপড়ের অস্থায়ী দোকান বসতো। কিন্তু এ বছর রেল কর্তৃপক্ষ সেখানে দোকান বসতে দেয়নি। ফলে এসব অস্থায়ী জামাকাপড়ের দোকান গড়ে উঠেছে রাজবাড়ী বাজারের মৃধা মার্কেট সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায়। এই পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ টাকার বেশি কাপড় বিক্রি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, প্রতি শীত মৌসুমে অক্টোবর মাসের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই ৪ মাস চলে পুরাতন শীতের কাপড়ের বেচাকেনা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অস্থায়ী হকার্স মার্কেট থেকে পুরাতন কাপড় কিনে থাকেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, হকার্স মার্কেটে অস্থায়ী শীতের কাপড়ের দোকান রয়েছে ২০টি। প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার টাকার বেশি বেচাকেনা হয়। প্রতিদিন এই হকার্স মার্কেটে ২ লাখ টাকার বেশি শীতের কাপড় বিক্রি হয়। সেই হিসেবে মাসে ৬০ লাখ টাকার বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। মৌসুমে ২ কোটি টাকার বেশি শীতের কাপড় বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার কথাও জানান তারা।

রাজবাড়ী রেলগেট এলাকার মৃধা মার্কেট সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় পুরাতন জামাকাপড়ের অস্থায়ী মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন জামাকাপড় কিনতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করছে। কেউ জামাকাপড় কিনছে, আবার কেউ দেখতে এসেছে। মার্কেটটিতে ক্রেতাদের বেশ ভিড়। এই অস্থায়ী মার্কেটে মোট ২০টির মতো দোকান বসেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত পুরো এলাকা। যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও এসেছে স্বল্প দামে গরমের কাপড় কিনতে। অস্থায়ী এসব দোকানে কোরিয়া, তাইওয়ান, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের পুরাতন ব্লেজার, জ্যাকেট, সোয়েটার, ট্রাউজার, মাফলার, টুপি, হুডি, ফুলহাতা গেঞ্জি, কম্বলসহ পুরুষ ও মহিলাসহ ছোট বাচ্চাদের শীতবস্ত্র বিক্রি হচ্ছে।

হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. রিদয় বলেন, আমি প্রতিবছর শীত মৌসুমে গরম কাপড়ের ব্যবসা করে থাকি। আমি ছেলেদের জ্যাকেট, টুপি, মাফলার, সুয়েটার বিক্রি করি। প্রতিটি জ্যাকেট ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে মানভেদে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। তবে মার্কেট থেকে আমাদের এই হকার্স মার্কেটে কাপড়ের দাম কম। তাই মানুষ এখানে জামাকাপড় কিনতে আসে। প্রতিদিন আমার ১৫ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি হয়।

আরেক ব্যবসায়ী আতর আলী শেখ বলেন, শীত পড়ায় বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। আমার এখানে বিদেশি পুরাতন শীতের কাপড় রয়েছে। কম দামে ভালোমানের কাপড় কিনতে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসছে। দিন যত যাচ্ছে বেচাবিক্রি বাড়ছে।

বিক্রেতা রুহুল আমিন বিশ্বাস বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে এই পুরাতন জামাকাপড় বিক্রি করি। আমার এখানে বেশিরভাগ জামাকাপড় বাইরের দেশের। এগুলো আমরা বস্তা ধরে কিনে নিয়ে আসি। এ ছাড়া এক্সপার্ট কোয়ালিটির কাপড় রয়েছে। কমদামি কাপড়গুলো ৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে, মাঝারি ধরনেরগুলো ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা আর কিছু দামি কাপড় ও কম্বল ১ হাজার বা তার বেশি বিক্রি হয়ে থাকে।

হাকার্স মার্কেটে কথা হয় আলমগীর শেখ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। পেশায় তিনি ভ্যানচালক। হকার্স মার্কেটের একটি দোকানে তিনি শীতের কাপড় দেখছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, ভ্যান চালিয়ে এ শীতে অনেক রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। তাই হকার্স মার্কেটে এসেছি কম দামে একটি জ্যাকেট কিনতে। আমাদের তো সামর্থ্য নেই অভিজাত মার্কেট থেকে কাপড় কেনার। এখান থেকে কমদামে একটি ভালো মানের জ্যাকেট কিনেছি।

পুরাতন কাপড় কিনতে আসা ক্রেতা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজার থেকে নতুন একটি জ্যাকেট কিনতে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে। তাই এই পুরাতন মার্কেট থেকে স্বল্প মূল্যে জ্যাকেট কিনতে এসেছি। এখানে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির ভালো ভালো জ্যাকেট রয়েছে। দামে মিললে কিনে নিয়ে যাব।

হকার্স মার্কেটে কাপড় সরবরাহকারী মো. শাওন শেখ বলেন, পুরাতন কাপড়ের মার্কেটটি স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়। এই মার্কেটের নাম পুরাতন কাপড়ের মার্কেট হলেও এখানে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির নতুন জামাকাপড়ও পাওয়া যায়। তবে পুরাতন বলতে এখানে কারও কোনো ব্যবহৃত জামাকাপড় নেই। এখানকার কাপড় গার্মেন্টস গোডাউনে দীর্ঘ দিন পড়ে থাকা কাপড়। এ ছাড়া বিদেশি বায়ারদের থেকে রিজেক্ট হওয়া কাপড় বেশি। আমরা এই কাপড়গুলো কেজি দরে কিনে নিয়ে আসি। প্রতিদিন এই হকার্স মার্কেটে ২ লাখ টাকার বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। মৌসুমে ২ থেকে ৩ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি হয় এই হকার্স মার্কেট।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এএএ