বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় বিরোধপূর্ণ সরকারি জমি দখল করে করাত কল স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে মোহন আলী বিশ্বাস নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। চিতলমারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বেদবতী মিস্ত্রী করাত কল নির্মাণের কাজ স্থগিত করে দেওয়ার পরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

মোহন আলী বিশ্বাস চিতলমারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। 

এদিকে মোহন আলী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন চিতলমারী উপজেলার বাসিন্দা রাজু আহমেদ নামে এক ব্যক্তি।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, চিতলমারী উপজেলার ৮নং কুরমনি মৌজায় হাট বাজারের পেরিফেরীভুক্ত খাস জমিতে মোহন আলী বিশ্বাস করাত কলসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। খবর পেয়ে গত ৮ ডিসেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বেদবতী মিস্ত্রী কাজ স্থগিত করে দেন। কিন্তু এরপরও মোহন বিশ্বাস  নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সীমানা প্রাচীরের সাথেই টিনশেড  করাত কলের স্থাপনা। করাত কলের জন্য কনক্রিটের ওপর লোহার অবকাঠামো রয়েছে। চারপাশে বেশ কিছু কাঠ রয়েছে।

করাত কলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল শেখ বলেন, এই জমিতে এক সময় বাঁশের হাট ছিল। কিন্তু মোহন আলী বিশ্বাস চেয়ারম্যান হওয়ার পর এই জায়গা দখল করে করাত কল নির্মাণ করেছেন। কয়েকদিন আগে কাজ বন্ধ ছিল, আবার দেখছি করাত কলের কাজ শুরু করেছে।

আবুল কালাম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ভূমি অফিস হওয়ার আগে থেকেই এখানে বাঁশের হাট ছিল। এখনতো দখল করে করাত কল বানানো হয়েছে। জায়গা খোলা থাকলে, সবার উপকার হয়। 

অভিযোগকারী রাজু আহমেদ বলেন, মোহন আলী বিশ্বাস জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি জমিতে করাত কল নির্মাণ করছেন। বিভিন্ন সময় এই জমি সংক্রান্ত মামলায় তিনি হেরে গেছেন। তার সব ধরনের কাগজ জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। বাজারের মূল্যবান সরকারি সম্পত্তি হওয়ায় জনস্বার্থে আমি এই অভিযোগ করেছি। আমি চাই এই জায়গাটি সবার কল্যাণে ব্যবহৃত হোক।

এ বিষয়ে মোহন আলী বিশ্বাস বলেন, আমার জমির সব কাগজপত্র ঠিক আছে। সরকার মামলা করে একাধিক বার হেরেছে। এখন সরকারি অফিসের সামনে মিল থাকায় ইউএনও স্থানান্তর করতে বলেছে। আমি মিল বিক্রি করে দেবো বলেছি। দুই মাস ধরে সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বেদবতী মিস্ত্রী বলেন, আদালতে ও ভূমি আপিল বোর্ডে মামলা থাকার পরও মোহন আলী বিশ্বাস ওই জমিতে স‘মিল নির্মাণের চেষ্টা করছিলেন। আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসমত হোসন বলেন, মোহন আলী বিশ্বাসের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ করে রাখতে বলা হয়েছে। যতদূর জানি তার করাত কলের লাইসেন্স নেই। সরকারি অফিসের কাছে কোনো অবস্থাতে করাত কল স্থাপন সম্ভব নয়। জায়গা জমি-সংক্রান্ত বিষয়টি সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) দেখছেন।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, কোনোভাবেই সরকারি জমি কেউ জবর দখল করতে পারবে না। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। 

 শেখ আবু তালেব/আরএআর