তিন পুরুষ ধরে হাতি-ঘোড়া তৈরি করে সুকমলের পরিবার
সুকমলের নিজের হাতে বানানো হাতি-ঘোড়ার বিশেষ দিক হলো এটি খাওয়া যায়। লোকজন আগ্রহের সঙ্গে এ হাতি-ঘোড়া কেনেন, খেয়ে দেখেন এবং পরিবারের জন্য নিয়েও যান। মেলা বা উৎসবের সময় এ হাতি ঘোড়ার কদরও বেড়ে যায়। তখন বাড়তি লোক নিয়োগ করে এ হাতি-ঘোড়া বানাতে হয়।
দেখা যায়, রংপুরের রোকেয়া মেলায় ভ্রাম্যমাণ মিষ্টি ব্যবসায়ী সুকমল কুমার চিনি ও গুঁড়ের তৈরি হাতি-ঘোড়া বিক্রি করছেন। তার কাছে কদমা, বাতাসাসহ বিভিন্ন মিষ্টি থাকলেও তার হাতি-ঘোড়ার ছাঁচ হলো বিশেষ মিষ্টি। ক্রেতারাও খুব আগ্রহের সঙ্গেই তার এই মিষ্টি কিনে খায়।
বিজ্ঞাপন
চাহিদা ভালো থাকায় প্রতি মেলায় ও উৎসবে হাতি-ঘোড়ার মিষ্টান্ন নিয়ে হাজির হন সুকমল কুমার। তিনি বলেন, আমার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। প্রতিহাটে গোবিন্দগঞ্জে বিভিন্ন মিষ্টান্ন সাজ, বাতাসা, কদমা বিক্রি করি। এছাড়া গাইবান্ধাসহ আশপাশে যেখানে মেলা বসে সেখানে এ মিষ্টান্ন বিক্রি করি। এখন রংপুরে রোকেয়া মেলা হচ্ছে এখানে এসেছি মেলা শেষে আবার বাড়ি যাব। মেলাগুলোতে মানুষ শখ করে চিনি গুড়ের ছাঁচ বাতাসা কিনে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যবসাটা ছিল আমার বাবার। ছোটবেলা থেকে তাকে বিভিন্ন মিষ্টি বানাতে ও বিক্রি করতে দেখছি। তার বয়স হয়ে যাওয়ায় আমি এ ব্যবসায় বসেছি। আমার বাবার আগে আমার দাদাও এই ব্যবসা করেছেন। আমার পুরো পরিবার এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পরিবারের লোকেরা মিষ্টান্নগুলো তৈরি করতে সাহায্য করেন। পরে সেগুলো বাজার ও মেলায় বিক্রি করা হয়।
তিনি জানান, বাজারে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় মিঠাই পণ্যের দামও বাড়াতে হয়েছে। এখন প্রতি কেজি কদমা, হাতি-ঘোড়ার ছাঁচ ও বাতাসা বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮০, নিমকি ১৭০, খাগড়াই ১৫০ টাকায়। গত বছর প্রতি কেজি কদমা, ছাঁচ ও বাতাসা যথাক্রমে ১০০, মুড়কি–নিমকি ৯০, খাগড়াই ১০০ টাকা।
তিনি আরও বলেন ছাঁচ বাতাসা আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খাবার। প্রতি মেলা বা উৎসব এগুলো ছাড়া পূর্ণতা পায় না।
মেলায় ঘুরতে আসা এক নারী বলে, হাতি-ঘোড়ার মত দেখতে এই মিষ্টিগুলো আমাদের দেশের ঐতিহ্যের অংশ। গুলো দেখলেই মেলার আমেজ পাওয়া যায়। খেতেও খুব ভালো। বাচ্চারা বেশি পছন্দ করে।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও রোকেয়া মেলা কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, মেলা প্রাঙ্গণে ১৩১টি স্টল রয়েছে। এছাড়া এর বাইরেও মেলা উপলক্ষ্যে অনেক স্টল বসেছে। এখানে কাপড়, বিশেষ মিষ্টান্ন থেকে শুরু করে সবই কেনাবেচা হয়। মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে আসে। আমরা আশা করছি এ মেলায় চার কোটি টাকারও অধিক বেচাকেনা হবে। প্রতিবছর রোকেয়া মেলার সময় এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। সকলে এটিকে রেওয়াজ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
শিপন তালুকদার/আরকে